অবরোধে আটকে থাকা গাড়ির লাইন।
জাতীয় সড়কের দু’ধারেই বিধি ভেঙে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ ছিল দীর্ঘদিনের। স্কুলে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় ছাত্রীর মৃত্যুকে ঘিরে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটল লাটাগুড়িতে।
শুক্রবার পাথর বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় এক স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লাটাগুড়ি। শুক্রবার সকালে ক্রান্তি ফাঁড়ির লাটাগুড়ির বাজারে সাইকেল আরোহী নবম শ্রেণির ছাত্রী লাকি পারভিনকে (১৬) পিষে দেয় ট্রাকটি। জখম ছাত্রীকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে লাকির মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পরেই বাসিন্দারা জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পৌঁছনোর পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় পথ অবরোধ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় সড়কে যান চলাচল এবং গতি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানানো হলেও, কোনও কাজ হয়নি। সেই সঙ্গে লাটাগুড়ি বাজার এলাকায় ৩১সি জাতীয় সড়কের দু’পাশ ধরেই বিধি ভেঙে অগুনতি ট্রাক দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। অবরোধের শুরুর পরে ক্রান্তি ফাঁড়ির পুলিশ এলেও বাসিন্দারা পথ অবরোধ চালিয়ে যান। পরে দুপুর ১টা নাগাদ ক্রান্তি ফাঁড়ির ওসিকে স্মারকলিপি দিয়ে অবরোধ তুলে নেন বাসিন্দারা। দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত ট্রাকের চালক আকবর আলিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মালবাজারের মহকুমাশাসক জ্যোর্তিময় তাঁতি বলেন, “দুঃখজনক ঘটনা। লাটাগুড়ির যানজট সমস্যার সমাধানে প্রশাসন উদ্যোগী হবেন।”
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকালে সাইকেলে চেপে লাগোয়া মসজিদ পাড়া এলাকার বাসিন্দা লাকি ও তার সহপাঠী সাহিদা বেগম স্কুলে যাচ্ছিল। লাকি সাইকেল চালাচ্ছিল, পিছনে বসেছিল সাহিদা। লাটাগুড়ি বাজারের জাতীয় সড়ক ধরে বন দফতরের রেঞ্জ অফিসের সামনে স্কুলে ঢোকার গলি। গলির মুখে রাস্তায় পাথর ছড়িয়ে থাকায় সাইকেলের পেছন থেকে সাহিদা নেমে যায়। সে সময়েই লাটাগুড়ি থেকে চালসাগামী একটি পাথর বোঝাই ট্রাক লাকির সাইকেলে ধাক্কা মেরে তাকে পিষে দেয়। খানিক আগেই সাইকেল থেকে নেমে যাওয়ায় সাহিদা রক্ষা পেলেও, চোখের সামনে দুর্ঘটনা দেখে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকেও জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মৃত ছাত্রীর বাবা মনিরুল হক প্রান্তিক কৃষক।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে অবরোধে সামিল সহপাঠিনী ও অভিভাবকেরা।
দুর্ঘটনার পরেই সকাল সাড়ে ১১টা থেকে লাটাগুড়িতে রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে অবরোধে সামিল হন মৃত ছাত্রীর পরিবারের সদস্য এবং এলাকার বাসিন্দারাও। লাকির স্কুলের পড়ুয়া, শিক্ষিকারাও অবরোধে সামিল হন। স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে, পড়াশোনাতেও লাকি ভাল ছিল। জাতীয় সড়ক থেকে স্কুলে প্রবেশের রাস্তার মুখে অবৈধভাবে দোকান গজিয়ে উঠেছে বলেও স্কুলের তরফে অভিযোগ করা হয়। যান নিয়ন্ত্রণের জন্য সিভিক পুলিশের কর্মীরা থাকলেও, নিয়ন্ত্রণ ঢিলেঢালা বলে অভিযোগ। স্কুলের তরফে ট্রাকটির বিরুদ্ধে লাটাগুড়ি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষিকা লিপিকা সুকুল ক্রান্তি ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিপিকা দেবীর অভিযোগ, “অবৈধ ভাবে গাড়ি দাঁড়ানো ও রাস্তার দু’পাশ দখল হওয়া নিয়ে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি।”
লাটাগুড়ির মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা ক্রান্তি ব্লক তৃণমূলের মহিলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, “আমরা দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি চাই না। কিন্তু সিপিএমের প্রধান ঘটনাস্থলে না আসায় সকলেই অবাক হয়েছেন।” সিপিএমের দখলে থাকা লাটাগুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান মুন্নি রায় বলেন, “দুর্ঘটনার সময় লাটাগুড়ির বাইরে ছিলাম। খবর পেয়েই লাটাগুড়িতে চলে আসি। লাটাগুড়িকে যানজট মুক্ত করার দায় যেমন পঞ্চায়েতের রয়েছে তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসের যারা অভিযোগ করছেন তাদেরও রয়েছে।”
শুক্রবার দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি।