মাটি ধসে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল শিলিগুড়ি ও মালবাজারের মধ্যের জাতীয় সড়কে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে সাড়ে ১২টা নাগাদ ডুয়ার্সের বাগরাকোট লাগোয়া জুরান্তি সেতুর কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ ধসে যায়।
রাতে একটি ট্রাক সেতুতে উঠতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিং ভেঙে ঝোরার জলে আছড়ে পড়ে যায়। চালক অবশ্য নিরাপদে ঝোরার জল পেরিয়েছেন। তার পর থেকেই ওই পথে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্যে মালবাজার থেকে ওদলাবাড়ি হয়ে গজলডোবার পথে যান চলাচল শুরু হয়। শুক্রবার সকালে রাস্তা মেরামতিতে নামে পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগ। ওই বিভাগের একজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র নির্মল মণ্ডল বলেন, “দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।”
সেচ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয় ডুয়ার্সে। পাহাড়েও প্রবল বৃষ্টি হয়। তার জেরেই জুরান্তি ঝোরায় জল বাড়ে। ঝোরার জল সেতুর পশ্চিম প্রান্তের স্পার ভেঙে সেতুর ‘গার্ড ওয়াল’-এর তলা দিয়ে রাস্তার মাটি ধসাতে শুরু করে। রাত সাড়ে ১২টা থেকেই ভাঙতে থাকে জাতীয় সড়ক। মুহুর্তের মধ্যেই ২৫ ফুট গভীর হয়ে যায় ধস। তবে তখনও পর্যন্ত বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনের নজরে না থাকায় ওই পথে যান চলাচল চলছিল। রাত ১টা নাগাদ শিলিগুড়ি থেকে বীরপাড়াগামী একটি ট্রাক জুরান্তি সেতুতে ওঠার সময়ে জাতীয় সড়কে গর্ত দেখতে পান চালক। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর রেলিং ভেঙে প্রায় ৩০ ফুট নীচে ঝোরার জলে আছড়ে পড়ে ট্রাকটি।
জাতীয় সড়কে জুরান্তি ঝোরায় এই ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের একই ভাবে একই জায়গায় মাটি ধসিয়েছিল জুরান্তি ঝোরা। সে বার কোচবিহারে দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সেতুতে আটকে পড়েছিলেন দীপা দাশমুন্সি, শঙ্কর মালাকার-সহ প্রদেশ কংগ্রেসের পাঁচ নেতা। ঝুঁকি নিয়ে সেতুর রেলিং ধরে ও পারে গিয়ে ওদলাবাড়ি থেকে অন্য গাড়ি ভাড়া করে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। সে বার প্রাথমিক ভাবে অস্থায়ী সংস্কার করে জাতীয় সড়ক খুলে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরে তা পাকাপাকি ভাবে মেরামতও করা হয়। কিন্তু তার দু’বছরের মাথায় ফের জাতীয় সড়ক বিপন্ন হওয়ায় পূর্ত দফতরের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বাসিন্দাদের মধ্যে। ওই কাজে দুর্নীতি হয়েছে, এই আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি করেছেন তাঁরা। পূর্ত দফতর অবশ্য জানিয়েছে, আগের মেরামতিতে ত্রুটি ছিল না। দফতরের যুক্তি, ঝোরার জল বাড়লে পশ্চিম পাড়ে থাকা জাতীয় সড়কের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়ে।
এ দিন আচমকা জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তি হয় ডুয়ার্সের বাসিন্দাদের। ভোর থেকেই জুরান্তি সেতুর দু’দিকে গাড়ির লাইন পড়ে যায়। আটকে যায় শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্সের দিকে আসা পণ্যবাহী গাড়িও। বাস যেখানে ৩০ টাকা ভাড়াতেই শিলিগুড়ি পৌঁছে দিত, সেখানে ঘুরপথে গজলডোবা দিয়ে যাওয়ার জন্য ১০ টাকা বেশি ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মালবাজারের বাসিন্দা বিক্রম পুরকায়স্থ শিলিগুড়ির একটি বহুজাতিক গাড়ি তৈরির সংস্থার কর্মী। তিনি বলেন, “প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে বাসে করে শিলিগুড়ি যাই। এ দিন বাস ঘুরপথে গজলডোবা হয়ে শিলিগুড়িতে যেতে দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। গজলডোবার পথে বাসের ভাড়া এবং সময় দুইই বেশি লেগেছে।” মালবাজার থেকে সড়কপথে ৫৫ কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়ি যেতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। গজলডোবার পথে আমবাড়ি দিয়ে শিলিগুড়ি যেতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার রাস্তা পেরোতে হচ্ছে। সময় লাগছে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। প্রশাসনের আশ্বাস, যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা মেরামতির ব্যবস্থা হবে।
বৃষ্টিতে ডুয়ার্সের ওদলাবাড়িতেও জাতীয় সড়কের ওপর ছ’ফুটেরও বেশি গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে ওদলাবাড়ি শহর লাগোয়া রেলগেটের কাছে ৩১নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর দু’ফুট ব্যাসার্ধের একটি গর্ত তৈরি হয়। টানা বৃষ্টির ফলে জাতীয় সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া একটি হিউম পাইপ ফেটে গিয়েই গর্তটি হয়েছে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ন’টি ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার নির্মল মন্ডল বলেন “অস্থায়ী ভিত্তিতে গর্তটির মেরামতের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত স্থায়ী মেরামতও করা হবে।”