কোচবিহার থেকে বাগডোগরা হয়ে কলকাতা যাওয়ার ছোট বিমান পরিষেবা চালু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছেই। সম্প্রতি দিল্লি থেকে বাগডোগরা বিমান বন্দরের গরমের মরসুমের বিমান চলাচলের বিস্তারিত সময়সূচি ঘোষণা করে দিয়েছে ডিরেক্টর অব সিভিল এভিয়েশন। চলতি বছরের আগামী ২৯ মার্চ থেকে ২৪ অক্টোবর অবধি সময়ের তালিকায় টাটা ভিস্তারার মতো বিলাসবহুল বিমানের সময়সূচি থাকলেও ছোট কোনও বিমান সংস্থার নাম নেই। উল্লেখ্য, গত ছয় মাস ধরে নানা সময়েই রাজ্য সরকারের তরফে ওই বিমান কিছুদিনের মধ্যেই চালু হতে চলছে বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ওই ছোট বিমান পরিষেবা দ্রুত চালু হতে চলেছে বলে শিলিগুড়িতে ঘোষণা করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, চলতি মাসেই কোচবিহার থেকে ওই বিমান চালুর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে পড়েছে। গত মাসের শেষে বাগডোগরায় ওই রুটে বিমান চালানোর কথা সংস্থাটির রয়েছে, তাঁদের তরফে দফতর-সহ আনুষাঙ্গিক প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই ব্যবস্থাও করা হয়। তার পরে আর কোনও কিছুই জানানো হয়নি। মূলত অন্ডাল বিমানবন্দরের বিদ্যুতের খুঁটি সরানো ছাড়াও অন্য পরিকাঠামোগত সমস্যা মেটা এবং মুখ্যমন্ত্রীর সময় পেলেই নতুন করে দিনক্ষণ করা হতে পারে। বাগডোগরা থেকে অন্ডালের নতুন বিমান বন্দরের মাটি ছুঁয়ে বিমানটির কলকাতা যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই রুটের মধ্যে কোচবিহার ছাড়া দুর্গাপুরও থাকবে।
বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় বলেন, “নতুন করে গরমের মরসুমে টাটা গোষ্ঠীর বিমান পরিষেবা চালু হচ্ছে। তবে এ ছাড়া নতুন কোনও বিমান চলাচলের খবর নেই। কোচবিহারের ছোট বিমানটি চালুর কথা শুনেছিলাম ঠিকই। তবে এখনও কোনও নির্দেশিকা পাইনি।”
অন্ডালের বিমানবন্দরের চিফ অপারেশনস অফিসার বীরেন্দ্র সিংহ প্রস্তাবিত বিমান চলাচলের কাজকর্ম সমন্বয়ের দায়িত্বে আছেন। রবিবার তিনি বলেন, “কোচবিহার থেকে বিমান চালু হবে ঠিকই। তবে এখনও দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সময় পেলে পরীক্ষামূলক ভাবে বিমান চালাব। তার পরে বাণিজ্যিকভাবে ওই বিমান চালু হবে। তবে তা কবে, সেটা এখনই বলতে পারছি না।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নতুন রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসতেই দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালে কোচবিহার থেকে কলকাতা ১৮ আসনের নতুন বিমান পরিষেবা চালু হয়। সেপ্টেম্বর থেকে মাস দেড়েক চলা ওই পরিষেবায় দুই দিনের মত গোটা বিমানের যাত্রী ছিলেন। বাকি দিনগুলি বিমানটি যাত্রী না হওয়ায় অনেক দিনই চলাচল করেনি। সেই সময় প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করে বিমানবন্দরটির পরিকাঠামো তৈরির কাজ করা হয়। ছোট বিমানটি না চলায় ফের রানওয়ে বড় করা ছাড়াও পরিকাঠামো তৈরির জন্য ২৫ কোটি টাকার মত বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। ৩৫০০ ফুটের রানওয়েকে মরা তোর্সা নদীর কিছুটা অংশের উপর দিয়ে বাড়িয়ে আরও লম্বা রানওয়ে করার কথা রয়েছে। সেই কাজও এখনও ঠিকঠাক শুরুই হয়নি।
এরই মধ্যে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একটি সংস্থার সঙ্গে কোচবিহার থেকে কলকাতা, দুর্গাপুর বিমান চলাচল নিয়ে চুক্তি করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে শিলিগুড়ি এসে তা জানিয়েও দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, বিমানবন্দরের কাজের সঙ্গে সঙ্গে ওই ১৯ আসনের বিমানের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকিও দেবে রাজ্য সরকার। নভেম্বর মাসের মধ্যে তা চালুও হতে পারে বলে জানানো হয়। এর পরে মার্চ মাসের কথা বলা হলেও তা এখনও ঠিকই হয়নি। আগামী সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রীর শিলিগুড়ি আসার কথা রয়েছে। কিন্তু বিমান চালু নিয়ে এখনও কোনও খবর সরকারি স্তরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়নি।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দফায় প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে। যাত্রী আসন সুনিশ্চিত করে কোচবিহার থেকে দুপুরের পর বিমানটিকে বাগডোগরায় আনা হবে। তার পরে বিকাল ৫ টা’র পর নির্ধারিত সব বিমান চলে গেলে বিমানটি যাত্রী নিয়ে প্রথমে অন্ডালে তার পরে সেখান থেকে কলকাতা যাবে। এতে শিলিগুড়ি থেকে আসন কোটা পুরো হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তা ছাড়া শিল্প-ব্যবসায়ী এবং পর্যটন মহলও গরমের সময় বিকালের পর কলকাতা যাওয়ার একটি নতুন বিমান পাবেন।