শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসলে এলাকায় দূষণ ছড়াবে, এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন শিলিগুড়ির রামঘাটের একাংশ বাসিন্দা। বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল হাইকোর্টে। শুক্রবার সেই আবেদনের প্রথম শুনানিতেই হাইকোর্ট আবেদনকারীদের আর্জি প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকার তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরকে দ্রুত ওই শ্মশানে চুল্লি নির্মাণ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
গত বছরের নভেম্বর মাসে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নেয় শিলিগুড়ির রামঘাটের একাংশ বাসিন্দা। এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলার আবেদনের শুনানি ছিল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আইনজীবী প্রদ্যুম্ন সিংহ বলেন, “আবেদন শুনেই মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। উল্টে দ্রুত চুল্লি নির্মাণের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে রায়ের প্রতিলিপি পাওয়ার পরে মন্তব্য করবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানো নিয়ে ইতিমধ্যেই বাসিন্দাদের আন্দোলনের চাপে ইতিমধ্যেই পিছু হঠেছে রাজ্য সরকার। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর শিলিগুড়ির রামঘাট শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর পরিকল্পনা নেয়। সেই মতো গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে চুল্লির শিলান্যাস অনুষ্ঠানের দিন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ প্রতিবাদ জানালে মহানন্দ মণ্ডল নামে এক বাসিন্দাকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পরে মহানন্দ মন্ডল সহ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দাকেই উল্টে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। জোর করে চুল্লি তৈরির প্রতিবাদে গত নভেম্বর মাসে প্রতিবাদী মঞ্চ গড়ে অনশনেও বসেন প্রতিবাদী বাসিন্দারা।
বিরোধী ডান-বাম রাজনৈতিক দলের নেতারাও মঞ্চে যোগ দেন। শ্মশানে শবদেহ নিয়ে যেতেও বাধা দেওয়ার অভিযোগে বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। শিলিগুড়ি থানার আইসির গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে, পাল্টা পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তোলেন বাসিন্দারা। এরপরেই প্রকল্পের কাজ গুটিয়ে নিতে শুরু করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর। ‘আপাতত’ কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা জানিয়ে দিয়েছেল মন্ত্রীও। এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশের পরে, রামঘাটে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির কাজে আর কোনও বাধা রইল না বলে সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে। এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি এখনও হাতে পাইনি। তবে শুনেছি হাইকোর্টের তরফে কড়া পর্যবেক্ষণ জানানো হয়েছে। এর বেশি কোনও মন্তব্য করা সম্ভব নয়।”
রামঘাট নিয়ে আন্দোলন চলার সময়েই প্রতিবাদী মঞ্চের তরফে মহানন্দ মন্ডল সহ অনান্যরা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। ‘মহানন্দ মন্ডল ও অনান্যরা বনাম রাজ্য সরকার’ নামে মামলাটি হাইকোর্টে নথিভুক্ত হয়। এ দিন নতুন জনস্বার্থ মামলার শুনানির তালিকায় ১১ নম্বরে মামলাটি ছিল।
আইনজীবী প্রদ্যুম্নবাবু দাবি করেন, মামলার আবেদনে বৈদ্যুতিক চুল্লিটি মহানন্দা নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। তাঁর কথায়, “সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, যদি দূষণের আশঙ্কা থাকবে তাহলে মহানন্দা নদীর পাড়ে কেন নিয়ে যেতে বলা হবে। তার কোনও সদুত্তর অন্য পক্ষ দিতে পারেননি।” আবেদনকারীদের তরফের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি বলেন, “মহানন্দ মন্ডল সহ অনান্যদের আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হবে।”
হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, রামঘাটের বাসিন্দাদের আবেদনে জানানো হয়, শিলিগুড়ির কিরণচন্দ্র শ্মশানে দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকলেও একটি অচল হয়ে রয়েছে। সে কথা জেনে কিরণচন্দ্র শ্মশানের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দু’টি চুল্লি সচল করে দেওয়ার নির্দেশও ডিভিশন বেঞ্চ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন অবশ্য জনস্বাথর্র্ মামলায় মূল আবেদনকারী মহানন্দ মন্ডল অবশ্য খুব বেশি মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “মামলাটি এ দিন শুনানির কথা ছিল। আইনজীবীর সঙ্গে এখনও বিস্তারিত কথা হয়নি। পুরো ঘটনাটি শুনে এবং আদালতের নিদে৪শের প্রতিলিপি দেখে যা বলার বলব।”