সিভিক ভলান্টিয়ার্স ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি এবং এক নেতার বিরুদ্ধে কয়েক লক্ষ টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার এই অভিযোগকে ঘিরে দিনহাটার গীতালদহ এলাকায় উত্তেজনাও ছড়ায়। টাকা নিয়েও চাকরি না দিতে পারার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতিকে হাট চত্বরের একটি বাড়িতে প্রায় আধঘণ্টা আটক করে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের জেরায় ওই নেতা দাবি করেন, তৃণমূলের ব্লক সভাপতির নির্দেশেই তিনি টাকা সংগ্রহ করেছেন। প্রায় ৮ লক্ষ টাকা তুলে ব্লক সভাপতিকে সাড়ে ৬ লক্ষ টাকাও দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেছেন।
টাকা তোলায় অভিযুক্ত ওই নেতা হলেন তৃণমূলের গীতালদহ-২ নম্বর অঞ্চল কমিটির প্রাক্তন সভাপতি অক্কাস আলি। অক্কাসের দাবি, দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের সভাপতি সুবল রায়ের নির্দেশেই সিভিক ভলান্টিয়ার্সের চাকরির জন্য ২৩ জন যুবকের থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার এবং অন্য একজনের থেকে ৭০ হাজার টাকা তুলেছিলেন। যাদের থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৯ জন সিভিক ভলান্টিয়ার্সের চাকরিও পেয়েছেন। সুবলবাবু টাকা ফেরত দেননি বলেই যাঁরা চাকরি পাননি তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া যায়নি বলে অক্কাস আলির অভিযোগ।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “আক্কাস আলির বিরুদ্ধে টাকা তোলা সহ নানা অভিযোগ ওঠার পরে সর্তক করেও ফল না মেলায় অঞ্চল কমিটির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাই হয়ত তিনি মিথ্যে অভিযোগ তুলছেন।”
এ দিকে, বৃৃহস্পতিবার টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে উত্তেজনা দেখে আক্কাস আলির স্ত্রী নুরজাহান বিবি দিনহাটা থানায় বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানালেও ‘রিসিভ কপি’ দেওয়া হয়নি বলে দাবি। নূরজাহান বিবির অভিযোগ, তিনি থানায় গেলে ৭ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বেশি রাতে তাঁর অভিযোগ পত্র নেওয়া হয়। তবে কেন রিসিভ কপি দেওয়া হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, শাসক দলের ব্লক নেতাকে বাঁচাতেই পুলিশ ঘটনাটিকে আড়াল করতে চাইছে।
কোচবিহারের জেলা পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব অবশ্য বলেন, “এমন কোনও অভিযোগ হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দিনহাটা ১ নম্বর ব্লক কমিটির সভাপতি সুবলবাবু সব অভিযোগ মিথ্যে বলে দাবি করে, ষড়যন্ত্রের পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। সুবলবাবুর দাবি, “অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে আক্কাস আলিকে সরিয়ে দেওয়ার কারণেই তিনি এসব কথা বলছেন। সিভিক ভলান্টিয়ার্সে নিয়োগ বহুদিন আগে হয়েছে। এখন তিনি বলছেন আমি টাকা নিয়েছি। এর থেকেই প্রমাণিত হচ্ছে মিথ্যে বলা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দাদের হাত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পরেই, অক্কাস আলিকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। আক্কাস আলির দাবি, “অঞ্চল সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময়েই সিভিক পুলিশ এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী পদে নিয়োগের জন্য সুবলবাবু আমাকে টাকা তুলতে বলেন। যাঁরা চাকরি পাননি তাঁরা টাকা চেয়ে চাপ দিচ্ছিলেন। এখন সুবলবাবু টাকা ফেরত না দেওয়ায় আমিও টাকা ফেরত দিতে পারিনি।”
এই অভিযোগ ওঠায় পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্তের দাবি করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক। দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “শাসক দলের নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি সামনে এসেছে। তাই ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পুলিশ অভিযোগ নিয়ে নানারকন টালবাহানা করছে। অভিযোগ গ্রহণ হয়েছে কিনা তাই স্পষ্ট নয়। এই ঘটনার তদন্ত চাই।”