ঘিঞ্জি রাস্তা, ফুটপাথও বেদখল কোচবিহারে

অতীতের মতো নিরিবিলি, ছিমছাম নেই রাসমেলা। এখন রাসমেলা ঘিরে প্রায় এক মাস ধরে কোচবিহারে চলে উৎসবের মেজাজ। মেলার টানে ভিন রাজ্যের দর্শনার্থীদের ভিড়ও উপচে পড়ে। অথচ রাসমেলাকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশের পর্যটক টানতে এখনও সরকারি কিংবা বেসরকারি, কোনও তরফেই কেউ উদ্যোগী হননি।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:২১
Share:

রাজবাড়ির মুখ ঢেকেছে ঘিঞ্জি বহুতলে। হিমাংশুরঞ্জন দেবের তোলা ছবি।

অতীতের মতো নিরিবিলি, ছিমছাম নেই রাসমেলা। এখন রাসমেলা ঘিরে প্রায় এক মাস ধরে কোচবিহারে চলে উৎসবের মেজাজ। মেলার টানে ভিন রাজ্যের দর্শনার্থীদের ভিড়ও উপচে পড়ে। অথচ রাসমেলাকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশের পর্যটক টানতে এখনও সরকারি কিংবা বেসরকারি, কোনও তরফেই কেউ উদ্যোগী হননি। তা নিয়ে কোচবিহারের ব্যবসায়ীদের অনেকের আক্ষেপ রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, রাসমেলাকে ঘিরে এক মাস ধরে যে উৎসবের মেজাজ থাকে, তা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই আরও লাভবান হতে পারত কোচবিহার।

Advertisement

কিন্তু যা হওয়ার তা অনেক সময়ে হয় না। বরং যেটা হওয়ার নয় তা-ই হয়ে থাকে। যেমন কোচবিহারের রাজার আমলের বড় মাপের রাস্তাগুলি ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। যে ‘রাজ-পথ’ নিয়ে কোচবিহারবাসীর গর্ব ছিল তা এখন হকার, দখলদারদের জন্য ঘিঞ্জি হয়ে গিয়েছে। গাড়ি, রিকশা, সাইকেল, বাইকের জন্য অফিস সময়ে যানজটে থমকে যাচ্ছে। সেই জট ছাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা। কারণ রাস্তা সেভাবে বাড়ছে না।

অথচ বহুদিন আগেই কোচবিহার পুরসভা গঠন হয়েছে। কিন্তু এখনও ওই রাজ আমলের রাস্তার উপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল কোচবিহার শহর। অভিযোগ, পুরসভা গঠন হওয়ার পরে হাতে গোনা কয়েকটি গলি হয়েছে কোচবিহারে। বড় রাস্তা তৈরি হয়নি কোথাও। রাজ আমলের রাস্তাগুলি কিছুটা চওড়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলি সযত্নে লালিত করতে পারছে না সরকার।

Advertisement

কোচবিহার শহরের রাস্তাগুলি পুরসভার ভিতরে থাকলেও সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। ওই দফতরের পরিসদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ওই রাস্তাগুলি চওড়া করার আর্জি জানিয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।” শহরকে যানজট মুক্ত করার ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথবাবুর বক্তব্য, “ফুটপাথ দখলমুক্ত না করা গেলে তা সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।” পরিসদীয় সচিব জানান, কালজানি নদীর উপর একটি সেতু তৈরির কাজ কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে। ওই সেতু তৈরি অসম যাওয়ার একটি বাইপাস রাস্তা তৈরির বিষয় মাথায় রয়েছে।

একটা সময়ে মড়াপোড়া দিঘি থেকে রেল গুমটি যাওয়ার নরনারায়ণ রোড ধরেই সমস্ত গাড়ি অসমে পাড়ি দিত। সুনীতি রোড কোচবিহার শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। ওই রাস্তা ধরেই হাসপাতাল, কাচারি মোড়, বাজার, সাগরদিঘি চত্বর যান সাধারণ বাসিন্দারা। মদনমোহন বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার জন্য তৈরি হয় বিশ্বসিংহ রোড। রাজবাড়ির সামনের রাস্তা কেশব রোড রাজবাড়ি গেটের উল্টো দিক দিকের রাস্তা নৃপেন্দ্রনারায়ণ রোড। ওই রাস্তা ধরে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার দূর থেকে একসময় রাজবাড়ি দেখা যেত। এখন ওই রাস্তা দিয়ে দিনের বেলা চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফুটপাথ দখল হয়ে গিয়েছে।

রাস্তার উপরেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে দিনভর। সেখানেই ট্রাকে জিনিসপত্র ওঠানো-নামানো চলে। এখন এমন ঘিঞ্জি এলাকার রূপ নিয়েছে ওই এলাকা যে দশ কিলোমিটার দূর থেকে রাজবাড়ি দেখতে পাওয়া যায় না। শুধু ওই রাস্তা নয়, সুনীতি রোডের দুই ধার দখল হয়েছে বহুদিন আগে। ফুটপাথ দখল করে পাকাপোক্ত ভাবেই চালু হয়েছে দোকান। যে দু-এক জায়গা একটু ফাঁকা রয়েছে, সেখানে দিনের বেলা গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। একই অবস্থা প্রায় সমস্ত রাস্তার। কালিকাদাস রোড, প্রিন্স ভিক্টর নৃত্যেন্দ্রনারায়ণ রোড, হিতেন্দ্রনারায়ণ রোড-এরও হাল একই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই রাস্তাগুলি তিন থেকে সাড়ে পাঁচ মিটার পর্যন্ত চওড়া রয়েছে। রাজ আমলের থেকে পরে খানিকটা বেশি চওড়া করা হয়।

বাসিন্দারা দাবি করেন, শুধু অসম যাওয়ার জন্য সে সব গাড়ি কোচবিহার শহরকে ব্যবহার করছে, সেগুলির জন্য বাইপাস রাস্তার প্রয়োজন। তা হলে একদিকে যেমন শহরের রাস্তার উপরে চাপ কমবে। যানজট অনেকটা কমে যাবে। স্থানীয় বাসিন্দা লেখক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, শহরকে আরও সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে রাস্তাগুলি নিয়ে সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়িত করতে হবে।

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement