জলদাপাড়ায় বনবাংলো পোড়ানো ও রেঞ্জ অফিসারের অফিস ভাঙচুরের আড়ালে যে একটি দুষ্টচক্র রয়েছে সেই সন্দেহ ক্রমশ জোরদার হচ্ছে বন দফতরের। তদন্তে নেমে বন অফিসাররা জানতে পেরেছেন, ঘটনার দিন এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বন দফতরের অফিসার মারধর করেছেন, বলে গুজব ছড়ানো হয়। তাতেই খেপিয়ে তোলা হয় এলাকাবাসীদের। ওই ঘটনার পিছনে কাঠ মাফিয়াদের হাত রয়েছে বলে ওই তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশেরও সন্দেহ, কাঠ পাচার চক্রই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে বন দফতর পরীক্ষা দিতে বাধা দিয়েছে বলে গুজব রটিয়ে বাসিন্দাদের উস্কানি দেয়। কারণ, ঘটনার পরে বিশদ খোঁজখবর করেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি।
বন দফতর জানিয়েছে, তদন্তে সঞ্জয় বর্মন নামে এক কিশোরের সন্ধান মিলেছে। গত সোমবার জলদাপাড়া লাগোয়া প্রধানপাড়ায় অসুস্থ ঠাকুর্দাকে দেখে জঙ্গলের পথ ধরে জয়গাঁয় নিজের বাড়ি ফিরছিল সঞ্জয়। ওই ছাত্রকে বন দফতরের এক অফিসার আটকে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। জয়গাঁর একটি স্কুলের থেকে সে এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। সে দিনই কিছুক্ষণ পরেই ওই কিশোরকে ছেড়ে দেয় বন দফতর। সঞ্জয় সে দিনই জয়গাঁয় চলে যায়। ওই কিশোরকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হিসাবে দেখিয়ে এবং মারধরের কারণে সে পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে গুজব ছড়িয়ে একটি দুষ্টচক্র লোকজনকে খেপায় বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।
প্রধানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয়ের ঠাকুর্দা সুরেন্দ্রনাথ বর্মনের কথায়, “মাধ্যমিক দেওয়ার পরে আমি নাতিকে জয়গাঁ থেকে ডেকে পাঠাই। সে দু’দিন আমার বাড়ি ছিল। তারপর সে চলেও যায়। তবে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে আমি তো জানি না। গণ্ডগোলের পরে জানতে পারি আমার নাতিকে নাকি বন দফতরের কোনও অফিসার মারধর করেছেন। নাতির সঙ্গে বা ছেলের সঙ্গে এর পর কথা হয়নি।” ওই দিন আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন যাঁরা, তাঁরা অবশ্য ছাত্রের নাম-ঠিকানা জানেন না বলে দাবি করেছেন। ঘটনার দিন, মঙ্গলবার অবশ্য রেঞ্জ অফিসের সামনে বুধবার সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। মাইকে অনশন করার কথা বলা হলেও কিছু যুবক প্রথমে লোহার গেট ভেঙে রেঞ্জ অফিস চত্বরে ঢুকে পড়েন। অফিসারদের কোয়ার্টার, গাড়ি ও অফিসে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে দেয় রেঞ্জ অফিসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি তারা পুড়িয়ে দেয়। পোড়ানো হয় বনবাংলো।
জলদাপাড়া জঙ্গলের গাছ কাটার পেছনে একটি দুষ্টচক্র দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে চলেছে বলে বন দফতরের অভিযোগ। বন দফতরের কর্মী ও অফিসারদের কড়া মনোভাবের ফলে কয়েক বছর ধরে আগের মত সেই চক্রটি গাছ কাটতে পারছিল না। বছর দেড়েক আগে জলদাপাড়া বনাঞ্চল জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পাওয়ার পর নিয়মানুযায়ী জঙ্গলের পথ ধরে লোকজনের যাতায়াতের উপর নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন বনাধিকারিকেরা।
গত মাস ছ’য়েক ধরে টিকিট কেটে লোকজন ওই পথ ব্যবহার করছিলেন। জঙ্গলে ঢুকে জ্বালানি সংগ্রহ করা থেকে বনের ভেতর গরু চরানো বন্ধ করতে উদ্যোগী হন জলদাপাড়ার কয়েকজন রেঞ্জ অফিসার। দীর্ঘদিন ধরে তাদের ব্যবহার করা পথে কর বসানোর পাশাপাশি জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ ও পশু চরাতে বাধা মেলায় জঙ্গল লাগোয়া বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। এই ক্ষোভকে কী ভাবে কাজে লাগিয়ে কড়া অফিসারদের শায়েস্তা করা যায় তা নিয়ে কাঠ মাফিয়ারা ছক কষেছিল বলে সন্দেহ। এর পরেই তারা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অনেকটাই নিশ্চিত বন দফতর। সেই কাজে নিরীহ বাসিন্দাদের জড়িয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে বলেও সন্দেহ করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।