গাছে ওষুধ দিতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু লোকশিল্পীর

ওষুধ আম গাছে স্প্রে করতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মৃত্যু হল লোকশিল্পীর। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার কোতুয়ালির গণিপুর গ্রামে। তাঁর নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ পাল (৪০)। পেশায় মানব পুতুল নাচ শিল্পী ছিলেন। তাঁর বাড়ি ওই গ্রামেই। জ্ঞানেন্দ্রনাথবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরিবারের পাশাপাশি শোক স্তব্ধ জেলার শিল্পীরাও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪০
Share:

ওষুধ আম গাছে স্প্রে করতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মৃত্যু হল লোকশিল্পীর। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার কোতুয়ালির গণিপুর গ্রামে। তাঁর নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ পাল (৪০)। পেশায় মানব পুতুল নাচ শিল্পী ছিলেন। তাঁর বাড়ি ওই গ্রামেই। জ্ঞানেন্দ্রনাথবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে পরিবারের পাশাপাশি শোক স্তব্ধ জেলার শিল্পীরাও। এ দিন অন্যের বাগানে আম গাছে স্প্রে করতে গিয়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যান তিনি। অন্য কর্মীরা তাঁকে তড়িঘড়ি উদ্ধার করে নিয়ে যান মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্ঞানেন্দ্রবাবু দীর্ঘদিন ধরেই মানব পুতুল নাচের সঙ্গে যুক্ত। মানব পুতুল নাচের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৩ সালে সুধী প্রধান লোকশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছিলেন। লোকশিল্পী হিসেবে মাসিক হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন তিনি।

জাগরণী লোক শিল্পী সংস্থা দলের প্রধান চরিত্র হিসেবে কাজ করতেন জ্ঞানেন্দ্রনাথবাবু। তবে শুধু মাত্র মানব পুতুল নাচ করে সংসার চালানো যায় না বলে দাবি শিল্পীদের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জ্ঞানেন্দ্রবাবুর দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে রাহুল এবং ছোট ছেলে রঞ্জন স্থানীয় একটি স্কুলে নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। সংসার চালাতে মানব পুতুল নাচের পাশাপাশি শ্রমিকেরও কাজ করতেন তিনি। কখনও রঙ মিস্ত্রির কাজ আবার আমের মরসুমে গাছে স্প্রে করার পাশাপাশি অন্য কাজও করতেন। এদিন কোতুয়ালির গণিপুর জোতের একটি আম বাগানে গাছে কীটনাশক স্প্রে করার কাজ করছিলেন জ্ঞানেন্দ্রবাবু। গাছে উঠে স্প্রে করার সময় হঠাৎ করে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যান তিনি।

Advertisement

ঘটনাস্থলে হাজির অন্য কর্মীরা তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে মালদহ মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুকে আঘাত লাগার কারণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। জ্ঞানেন্দ্রবাবুর মৃত্যুতে প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন পরিবারের পাশাপাশি ওই সংস্থার শিল্পীরাও। জ্ঞানেন্দ্রবাবুর স্ত্রী দীপালি দেবী বলেন, ‘‘ভাল শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসন কোনও কদর দেয়নি। নিয়মিত যাতে কাজ করতে পারে তার ব্যবস্থাও করেনি প্রশাসন। এখন দুই ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাব, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’’ জাগরণী সংস্থার দলপতি সন্দীপন রায় বলেন, ‘‘একজন ভাল শিল্পীকে হারালাম। এখন মানব পুতুল নাচের তেমন কদর নেই। তাই এখন শ্রমিকের কাজ করেই সংসার চালাতে হয়। প্রশাসন সরকারি প্রকল্পগুলির প্রচারে আমাদের ব্যবহার করলে অনেক সুবিধে হয়।’’ এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষ মন্ডল বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। পরিবারকে সরকারি সাহায্য করা যায় কিনা তা আমরা দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement