টাকা মেটানো হবে, জানালেন মন্ত্রী

কর্মিসভায় সরকারি পাউচের জল, বিতর্ক

আপদকালীন পরিস্থিতিতে বিলির জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তৈরি জলের পাউচ, সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন সরকারি মেলায় দেখা গিয়েছে। সরকারি খরচে তৈরি সেই জলের পাউচ এবার বিলি হল শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৮
Share:

পাউচে সরকারি ছাপ। —নিজস্ব চিত্র।

আপদকালীন পরিস্থিতিতে বিলির জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তৈরি জলের পাউচ, সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন সরকারি মেলায় দেখা গিয়েছে। সরকারি খরচে তৈরি সেই জলের পাউচ এবার বিলি হল শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও।

Advertisement

রাজ্য সরকারের ছাপ মারা ৪০০ মিলিলিটার জল ভর্তি এই পাউচ, বিক্রি করা হয় না। মূলত কোনও এলাকায় বন্যা, ভূমিকম্প অথবা আপদকালীন পরিস্থিতি হলে ত্রাণ হিসেবে এই পাউচ ব্যবহার করার কথা। কোনও এলাকায় পেটের রোগের সংক্রমণ হল অথবা জলকষ্ট দেখে দিলে অথবা অনান্য প্রয়োজনে এই পাউচ সরকারি নির্দেশে ব্যবহার করা যায় বলে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি মেলাতেও প্রশাসনের নির্দেশে এই পাউচগুলি বিনামূল্যে বিলি করা হয়েছে। যদিও, গত মঙ্গলবারে এই সরকারি পাউচের অন্য ব্যবহারও দেখা গিয়েছে।

মঙ্গলবার শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভা ছিল। সেই সভায় আসা কর্মীদের খাওয়ারের ব্যবস্থা করা হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। বাঘাযতীন পার্ক এবং স্টেডিয়াম দু’জায়গাতেই তৃণমূল কর্মীদের তেষ্টা মেটানোর জন্য সরকারি জলের পাউচ বিলি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ১০ হাজার পাউচ সভাস্থল এবং স্টেডিয়ামে বিলি করা হয় বলে জানা গিয়েছে। বুধবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে গিয়ে সরকারি ছাপ মারা ব্যবহৃত পাউচ পড়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নির্দেশেই শিলিগুড়িতে তৃণমূলের সভায় পাউচ পাঠানো হয়েছিল। প্রতিটি পাউচের জন্য জেলা প্রশাসন বা অন্য সরকারি দফতর থেকে ২ টাকা করে নেয় জনস্বাস্থ্য দফতর। গত মঙ্গলবারে সরবারহ করা পাউচের জন্য অন্তত ২০ হাজার টাকা মেটাতে হবে বলে দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে।

Advertisement

তৃণমূলের তরফে অবশ্য টাকা দিয়েই জল কেনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌতম দেব বলেন, “দলের তরফে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ১২টি ট্যাপকল বসানো হয়েছিল। পুরসভা থেকে জল ভাড়া করা হয়েছিল। আরও কোনও সরকারি সংস্থা থেকে জল নেওয়া হয়েছিল কি না তা খোঁজ নেব। যদি নেওয়া হয়, তবে তার টাকাও মেটানো হবে। সভায় জল কিনেই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্ক এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে জলের পাউচ পাঠানোর নির্দেশ এসে পৌঁছয় গত সোমবার দুপুরে। তারপরেই শিলিগুড়ি লাগানো একটি প্লান্ট থেকে পাউচগুলি আনিয়ে সরবরাহের ব্যবস্থা হয়। মঙ্গলবার জলের পাউচ ভর্তি পাউচ গুলি পৌঁছে দেওয়া হয়। তৃণমূলের সভায় প্রায় ৫ হাজার লিটার জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল সরকারি উদ্যোগে। জল তুলে পরিশ্রুত করে পাউচ বন্দি করতে প্রতি লিটারে অন্তত ৪ টাকা খরচ হয় বলে জানা গিয়েছে। কিছুটা ভর্তুকি দিয়েই সরকারি প্রয়োজনে জল পৌঁছে দেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।

রাজনৈতিক দলের সভায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ‘ভর্তুকি’ দেওয়া জলের পাউচ বিলি করা যায় কিনা সে বিষয়ে অবশ্য দফতরের কোনও আধিকারিকই মন্তব্য করতে চাননি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মেকানিকাল বিভাগের শিলিগুড়ির নির্বাহী আধিকারিক দীপককুমার সিংহ সংবাদমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন। তবে দফতরেরই উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক অধিকারিক প্রশ্ন তুলে বলেন, “সরকারি নির্দেশ ছাড়া, আমরা কী জলের পাউচ সভায় পাঠাতাম?”

সরকারি নির্দেশে শাসক দলের কর্মিসভায় কেন জল পৌঁছে দেওয়া হবে, সেই নীতিগত প্রশ্নই তুলেছে বিরোধীরা। সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এই সরকার কোনও নীতির তোয়াক্কা করে না। দল আর প্রশাসনকে এক ফেলেছে তৃণমূল। সে কারণেই সরকারি খরচে দলের সভা হয়।” বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসুর কটাক্ষ, “ক্ষমতায় থাকলে যে সবই করা সম্ভব তা তৃণমূল সরকার তার বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বুঝিয়ে দিচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement