দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষাই বাতিল করে দিলেন কোচবিহারের পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও দুর্নীতি হয়েছে বলে মানতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইন্দ্রজিত্ রায়। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ এই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর কথায়, “নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেন যে, অভিযোগ ঠিকই ছিল।”
উপাচার্য ইন্দ্রজিত্বাবুর বক্তব্য, কর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন কেবল একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে কর্মপ্রার্থীদের অনেকেই পরীক্ষার বসার সুযোগ পাননি। বৃহস্পতিবার জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, “বাংলা, হিন্দি, নেপালি প্রভৃতি ভাষাতেও ওই বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত ছিল। তাই আগ্রহীদের সবাইকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিতে চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে ফের ওই পরীক্ষা নেওয়া হবে।” প্রশ্ন উঠেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার এত দিন পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হঠাত্ কেন এ কথা মনে হল? উপাচার্যর দাবি, “অনেকেই ওই বিজ্ঞাপন দেখতে পাননি বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন। তাতে ব্যথিত হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মোট ১০টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রায় আটশো জন চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। গত ২০ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে সফল পরীক্ষার্থীদের নাম, রোল নম্বর প্রকাশিত হয়। সেই তালিকায় কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মেয়ে, আত্মীয়া-সহ ৫ জনের নাম থাকায় ওই পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ৫ পরীক্ষার্থীই কী করে মোট ৫০ নম্বরের মধ্যে ৪০ নম্বর বা তার বেশি পেলেন, তা নিয়ে অভিযোগ তোলেন বিজেপি, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব।
সরকারি সূত্রে খবর, গোটা ঘটনা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন রাজ্য শিক্ষা দফতরের কর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রীই ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে নির্দেশ দেন। তার পরে এ দিন তা বাতিলের কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ দিন উপাচার্য অবশ্য দাবি করেন, “রাজনৈতিক কোনও চাপের ব্যাপার নেই। সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” তিনি জানান, বিষয়টি শিক্ষা দফতরে ফ্যাক্স করে জানিয়ে দেবেন তাঁরা। নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ, তাঁদের কী হবে? উপাচার্যের জবাব, “তাঁরা আগে যখন ভাল পরীক্ষায় দিয়েছেন, এ বারও ভাল পরীক্ষা দেবেন।”
তবে শুধু কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, উপাচার্যের ভূমিকা, সরকারি গাড়ির তেল খরচ ও উপাচার্যের ঘনঘন শিলিগুড়িতে যাতায়াত করার মতো একাধিক বিষয় নিয়েও শিক্ষা দফতরে অভিযোগ পৌঁছেছে। শিক্ষা দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, “নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় পরীক্ষা প্রক্রিয়া বাতিল করে স্বচ্ছতার বার্তা দেওয়া হয়েছে।”