শিক্ষকদের ঋণের বোঝায় চাপা পড়েছে কন্যাশ্রী।
ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে এসে গিয়েছে সরকারি প্রকল্পের টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গোঁ ধরে বসেছেন, ওই স্কুলের পাঁচ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী ঋণ নিয়েও তা পরিশোধের নামগন্ধ না করায় ছাত্রীদের বরাদ্দ মঞ্জুর করা হবে না। তারই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মালদহের মিলনগড় সিনিয়র হাই-মাদ্রাসার ছাত্রীরা ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখায়।
তবে তাতেও বিশেষ হোলদোল নেই বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের ওই শাখার কর্তাদের। বরং কড়া সুরেই তাঁরা পাল্টা বার্তা দিয়েছেন, আগে ঋণের টাকা মেটানো হোক। তারপরে ওই সরকারি প্রকল্পের টাকা দেওয়ার কথা বাবা যাবে। সরকারি প্রকল্পের টাকা এ ভাবে আটকে রাখা যায়?
চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে ঘটনাটি শুনে স্তম্ভিত। তাঁর বিস্ময়, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কোন সাহসে নিজের হাতে এই ভাবে আইন তুলে নিলেন তা বুঝতে পারছি না। জেলাশাসককে খবরটা জানিয়েছি। বিডিও-কে বলেছি শুক্রবারের মধ্যেই রিপোর্ট দিতে।” হরিশ্চন্দ্রপুর-২-এর বিডিও কৌশিক পাল বলছেন, “ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এমন কাজ করতে পারেন না। বকেয়া টাকা আদায়ে এটা কোনও রকম পদ্ধতি হতে পারে না। তাঁরা আইনি পথে যেতে পারতেন।”
গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মিলনগড় শাখার ম্যানেজার সমরেন্দ্র বিশ্বাসের অবশ্য বিশেষ হেলদোল নেই। নির্বিকার গলায় তিনি বলেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা আটকে দেওয়াটা কোনও ভাবেই আমাদের অভিপ্রায় নয়। শিক্ষকেরা ঋণ নিয়ে তা বেমালুম ‘ভুলে’ গেলেই বা চলবে কী করে বলুন!” তিনি জানান, টাকা আদায়ের জন্য ‘চাপ’ দিতেই এই ‘পদ্ধতি’ নেওয়া হয়েছে।
মিলনগড়ের ওই হাই-মাদ্রাসার ছাত্রীদের দাবি, বার বার ব্যাঙ্কে গিয়ে ধর্না দিলেও তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে‘টাকা এলেও তোমাদের হাতে পাশ বই দেওয়া হবে না।’ কেন? ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে উত্তর মিলেছে: ‘মাদ্রাসার শিক্ষকদের ঋণের টাকা ফেরত দিতে বলো।’
তবে ব্যাপারটা যে নিয়ম-বিরুদ্ধ, তা মেনে নিয়েছেন বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কে মালদহের রিজিওনাল ম্যানেজার সব্যসাচী মজুমদার। তিনি বলেন, “এটা ব্যাঙ্ক করতে পারে না। কাজটা যে এক্তিয়ারের বাইরে সেটা মেনে নিচ্ছি।” যদিও সহকর্মীদের হয়ে তাঁর যুক্তি, “শিক্ষকরা ঋণ নিয়েও বছরের পর বছর তা দেবেন না, এটাও তো ঠিক নয়।” এ দিন বিক্ষোভের পরে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, শুক্রবার ওই ছাত্রীদের বই দিয়ে দেওয়া হবে বলে।
এ ব্যাপারে ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান বলেন, “স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক ব্যক্তিগত ঋণ নিয়েছেন। তা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার জন্য ছাত্রীরা সরকারি প্রকল্পের টাকা পাবে না কেন?” তিনি জানান, আজ, শুক্রবার এ ব্যাপারে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। এ দিন ওই মাদ্রাসার এক ছাত্রী বলেন, “গত দু’সপ্তাহ ধরে আমরা ব্যাঙ্কে যাচ্ছি। টাকা এসে গিয়েছে বলে জানানো হলেও আমাদের বলা হয়েছে পাশবই দেওয়া হবে না। কারণ জানতে চাওয়ায় বলা হল, আগে শিক্ষকদের টাকা ফেরত দিতে বলো, তার পরে কন্যাশ্রীর টাকা।” ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে ব্যাঙ্কের ওই শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন মাদ্রাসার ওই শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা। ৩ বছর ধরে কোনও টাকাই তাঁরা পরিশোধ করছেন না বলে ব্যাঙ্কের অভিযোগ। ওই শিক্ষকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই অবসর নিয়ে নিয়েছেন দু’জন। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন--এ ভাবে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করলে ব্যাঙ্ক চলবে কী করে?