দাওয়া শেরপা।—নিজস্ব চিত্র।
বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার হল উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বিডিও দাওয়া শেরপার (৪৫) দেহ। বুধবার দুপুরে কালিয়াগঞ্জের সরকারি আবাসনের শোওয়ার ঘরেই দাওয়া শেরপাকে পোশাকবিহীন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর দেহ বাঁ দিকে কাত হয়ে ছিল। হাত দু’টি বুকের কাছে ভাঁজ করা ছিল। এদিন জেলাশাসক স্মিতা পান্ডে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচার উপস্থিতিতে পুলিশ বিডিও-র শোওয়ার ঘর ও মৃতদেহ পড়ে থাকার ভিডিও রেকর্ডিং করে। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “দাওয়া শেরপা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি বদলি চেয়ে আবেদনও করেছিলেন। সেই আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে বিডিও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত সঠিক ভাবে মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়। তাঁর বাড়ি দার্জিলিং জেলার কাকঝোরা এলাকায়। তিনি ২০১২ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে কালিয়াগঞ্জের বিডিওর দায়িত্ব নেন।
পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিডিও আবাসনে ছোট-বড় মিলিয়ে ছ’টি ঘর রয়েছে। বিডিও দাওয়া ছাড়াও ওই আবাসনের একটি ঘরে তাঁর দূর সম্পর্কের ভাই তরুণ বিশ্বাস থাকেন। তরুণবাবু কালিয়াগঞ্জের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী। তরুণবাবু জানিয়েছেন, তিনি দাওয়ার শোওয়ার পাশের একটি ঘরে রাতে ঘুমাতেন। প্রতিদিনের মতো এদিন সকাল ১০টা নাগাদ তিনি ব্যাঙ্কে চলে যান। আবাসনের বাইরের গ্রিলের গেট ও চত্বরের সদর দরজা খোলা ছিল। তরুণবাবু বলেন, “মঙ্গলবার বেশি রাতে দাদা আবাসনে ফিরেছিলেন। তাই তিনি ঘুমোচ্ছেন ভেবে সকালে ডাকিনি। পরে বিডিও অফিসের কর্মী ও পুলিশের ফোন পেয়ে ব্যাঙ্ক থেকে আবাসনে ছুটে এসে দেখি দাদার মৃতদেহ বিছানার উপর পড়ে রয়েছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই দিনাজপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বিডিও দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে গিয়েছিলেন। বাইরের কোনও হোটেল থেকে খাওয়া দাওয়া সেরে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তিনি আবাসনে ফিরে নিজের শোওয়ার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। এদিন বেলা ১২টা নাগাদ বিডিও অফিসে ব্লক কন্যাশ্রী প্রকল্প মেলার সরকারি দায়িত্ব বণ্টন ঠিক করতে দাওয়া একটি বৈঠক ডেকেছিলেন। পৌনে ১২টা পর্যন্ত তিনি দফতরে যাননি। বিডিও অফিসের কয়েকজন কর্মী আবাসনে গিয়ে তাঁর শোওয়ার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে তাঁরা বেশ কয়েকবার তাঁর শোওয়ার ঘরের দরজায় শব্দও করেন। জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের খবর দেন। এর পরেই কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ সহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা ওই আবাসনে গিয়ে বিডিও-র মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
বিডিও অফিসের কয়েকজন কর্মী জানিয়েছেন, বিডিও দাওয়াবাবু দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।