চার মাসেই এই হাল রাস্তার। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে তৈরি প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পাকা রাস্তা মাত্র চার মাসের মধ্যে বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের ঘটনা। লোকসভা ভোটের আগে মার্চে রাস্তাটি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে এক ঠিকাদার সংস্থা তৈরি করে। কুমারগঞ্জ থানা থেকে দশ-মাইল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রাস্তাটি জেলা পূর্ত দফতরের রাস্তাটি বেহাল হয়ে ছিল। নতুন করে পিচ পাথর দিয়ে পাকা করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ স্পেশাল বিআরজিএফ তহবিল(ব্যাকওয়ার্ড রিজন গ্রান্ড ফান্ড) থেকে ওই টাকা বরাদ্দ করে।
মাত্র এক বর্ষাতেই রাস্তার উপরের পিচ ও কুচি পাথরের চাদর উঠে বেহাল হয়ে পড়েছে। ফলে, ওই প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা উত্তরবঙ্গ দফতরের ভূমিকা নিয়েও সরকারি মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের একাংশের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সিপিএমের প্রাক্তন পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের অভিযোগ, “রাস্তার উপরে দামি বিটুমিন (পিচ)ও কুচি পাথরের মিশ্রণে আস্তরণ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কমদামি বিটুমিন ব্যবহার ককরা হলে কুচি পাথরের আস্তরণ উঠে যেতে বাধ্য। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অধীনে কাজ হয়ে থাকলে তাদেরই জবাব দিতে হবে। ওই দফতরও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। জনতার টাকা নয়ছয় করা কখনও মেনে নেওয়া যায় না।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা আইনজীবী নীলাঞ্জন রায়ের অভিযোগ, ওই রাস্তার অনিয়মের কাজ আড়াল করতে উঁচুতলার প্রভাবশালীদের একাংশ সক্রিয় বলেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে ওই রাস্তার কাজ কেন নিম্নমানের হয়েছে তা প্রকাশ্যে জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আন্দোলন করা হবে।” সেই সঙ্গে প্রয়োজনে কলকাতা হাইকোর্টে সব কিছু জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ।
ওই রাস্তার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বিপ্লব দেব বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার উপর পাট শুকানোয় কিছু জায়গায় কুচি পাথরের আস্তরণ উঠে গিয়েছে।, কাজের ১০ শতাংশ টাকা সিকিউরিটি-মানি হিসাবে জমা আছে। নির্দেশ পেলেই রাস্তা মেরামত করে দেওয়া হবে।”
এই ঘটনার খবর পেয়েছেন পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, “ওই রাস্তাটি পূর্ত দফতর তৈরি করেনি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় হয়েছে। রাস্তা বেহাল হয়ে পড়লে ফের তৈরি করে দেওয়া হবে।” জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার অরুপ রায় জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে রাস্তা তৈরি সম্পূর্ণভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য তথা জেলার আইন পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র অবস্য কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “ঠিকাদার কাজ ঠিকমতো না করলে রাস্তার এমনই হাল হবে। প্রশাসনিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।” কুমারগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক মাহমুদা বেগম অবশ্য দাবি করেন, রাস্তাটি তৈরির পরই আত্রেয়ী নদীর বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়। বোল্ডার বোঝাই ট্রাক চলাচল করায় দ্রুত ওই রাস্তাটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সিকিউরিটি মানি আটকে দেওয়া হয়েছে।
কুমারগঞ্জ থানার সামনে থেকে বালুরঘাটের বোল্লা অঞ্চলের ১০ মাইল এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার বেহাল রাস্তাটি গত মার্চ মাসে নতুন করে পিচ পাথর ফেলে তৈরি করা হয়। ওই রাস্তাটি কুমারগঞ্জ থানা হয়ে বোল্লার দশ মাইল এলাকায় বালুরঘাট-গঙ্গারামপুর সদর রাস্তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রাস্তাটি বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে গোটা রাস্তার কুচি পাথর উঠে গিয়ে জায়গায় জায়গায় রাস্তা ধসে গিয়ে তলার মাটি বেরিয়ে পড়ায় রাস্তা তৈরিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কোয়ালিটি-কন্ট্রোল টিমের ইঞ্জিনীয়ারদের পাঠিয়ে ওই রাস্তাটি সমীক্ষা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”