বামেদের সাংবাদিক বৈঠক শিলিগুড়িতে। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ১০০ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলার তদন্তে ঢিলেমি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই মামলায় গোদালা কিরণ কুমারকে গ্রেফতারের পরে তৎকালীন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা বাম জমানায় যিনি এসজেডিএ’র চেয়ারম্যান ছিলেন সেই অশোক ভট্টাচার্য। বুধবার দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি এ ব্যাপারে অভিযোগ তোলেন। মামলার ভার পুলিশের হাত থেকে দেওয়া হয়েছে সিআইডি’কে। তাঁর অভিযোগ, সিআইডি তদন্তের নামে কিছুই করছে না। তাদের হাতে মামলা যাওয়ার পর থেকে এক জনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। বরং যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওই মামলার ভার সিবিআই’কে দেওয়ার দাবিতে লাগাতার আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অশোকবাবুরা। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এসজেডিএ ঘেরাও অভিযানের ডাক দিয়েছে বামেরা।
এ দিন তাঁরা জানিয়ে দেন, পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় অনুমতি না দিলেও ঘেরাও-বিক্ষোভ অভিযান থেকে পিছিয়ে আসার প্রশ্ন নেই। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোকবাবুই বিক্ষোভ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকবেন। যদিও বামেদের দাবি ও অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চাননি সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিশে অভিযোগ করে মামলার তদন্ত শুরু হয়। সমস্ত এখন হাইকোর্টের বিচারাধীন। কে কী বলল বা করবে তা নিয়ে আমি কিছু বলব না।” এসজেডিএ সূত্রের খবর, সমস্ত বিষয়টি নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।
পুলিশের হাত থেকে এ বছর গোড়াতেই ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডি’কে। সিআইডি অফিসাররা নথিপত্র পরীক্ষা করলে বা কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কাজের কাজ কিছু করছেন না বলে অভিযোগ। অশোকবাবু বলেন, “সারদার মত এসজেডিএ-তেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। শাসক দল তৃণমূলের একাধিক নেতা এতে জড়িত। আমরা এর সিবিআই তদন্ত দাবিতে বাঘাযতীন পার্ক থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে সংস্থার অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাব।” কাজ না হলে সিবিআই তদন্তের দাবিতে পরবর্তীতে এসজেডিএ দফতর অচল করে দেওয়ার কর্মসূচিও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এই দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবারও মিছিল করবেন তাঁরা।
এসজেডিএ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে দু’টি মামলাও হয়েছে। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস নেতা সুজয় ঘটকের পাশাপাশি কলকাতা এক সিপিএম কর্মীও আরেকটি মামলা করেছেন। বিষয়টি এখন হাইকোর্টের বিচারাধীন। গত সপ্তাহেই হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশের সিআইডিকে মামলার খামবন্দি রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি, এনফোরসমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি’ও মামলার তদন্ত শুরু করেছে। গত এক মাসের মধ্যে ইডির অফিসারেরা এসজেডিএ-র কয়েকজন বোর্ড সদস্যকেও কলকাতায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সিপিএম নেতা অশোকবাবু বলেন, “কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষা করছি। আশা করছি, উচ্চ আদালত নির্দেশ দেবে।” একইভাবে সুজয়বাবু বলেছেন, “সিবিআই তদন্ত হলেই সত্যতা মানুষের সামনে আসবে।”
এসজেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তত ১০০কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে নেমে এসজেডিএ-র তিন বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল, প্রবীণ কুমারকে গ্রেফতার করে। পরে দুটি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজয় মৈত্র ও তাপস বসুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত একটি সংস্থা ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে দেবব্রতকেও গ্রেফতার করা হয়। আরও অন্যান্য প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, শঙ্কর পাল, সুব্রত দত্তকে। আধিকারিক ও ঠিকদার-সহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করে জেরা করা হয়। তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য-সহ এসজেডিএ’র বোর্ডের সদস্য তথা কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেতা রঞ্জন শীলশর্মা এবং জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি চন্দন ভৌমিককে।