ইটাহারের মেঘনাদ সাহা কলেজের ২ এবিভিপি সমর্থকের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার দু’দিন পরেও পুলিশ অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি। ওই ঘটনার পরে এবিভিপির তরফে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য গৌতম পাল, টিএমসিপির জেলা কার্যকরী সভাপতি ইন্দ্রনীল আচার্য-সহ টিএমসিপির ১৬ জন সমর্থকের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
তবে টিএমসিপি ও এআইএসএফের তরফে পরস্পরের বিরুদ্ধে আরও দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তকে জেরা করেনি পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে এবিভিপি ও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার ইটাহারে মুখে কাপড় বেঁধে ধিক্কার মিছিল করেন বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে ইটাহার থানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে ওসি নিম শেরিং ভুটিয়ার কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
পুলিশ তিন দিনের মধ্যে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিজেপির ওই প্রতিনিধি দল গুলিবিদ্ধ এবিভিপি সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের লোকজনকে ত্রাণ ও আর্থিক সাহায্য তুলে দেন।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা পুলিশের তদন্তে কোনও গাফিলতির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “পুলিশ গুলিবিদ্ধ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের জেরা করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।’’
সোমবার ইটাহারের মেঘনাদ সাহা কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ে গোলমাল বাধে। এআইএসএফের সমর্থকেরা মিছিল করে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, সেইসময় কলেজ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ভদ্রশীলা এলাকায় টিএমসিপির সমর্থকদের সঙ্গে এবিভিপি সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ওই সংঘর্ষে মিঠুন শেখ ও সেলিম হোসেন নামে দুই এবিভিপি সমর্থকের বা পায়ে ও কোমরে গুলি লাগে। এবিভিপি ও এআইএসএফের সমর্থকেরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারায় কলেজের ২৭টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় টিএমসিপি। মিঠুন বর্তমানে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ও সেলিম ও সুদীপ্তবাবুকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
ইন্দ্রনীলবাবুর দাবি, “কলেজের ক্ষমতা দখল করতে এবিভিপি ও বিজেপি আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে, তা আগে আশঙ্কা করে আমি বাড়িতে ছিলাম। অথচ আমার নামে অভিযোগ করা হয়েছে।”
ইটাহার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তন্ময় পাল বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সরকারি নথি অনুযায়ী, গত সোমবার গৌতমবাবু সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত পেটের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তিনি জরুরি বিভাগের একটি বেডে শুয়ে ছিলেন। পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে ওষুধ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।” বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শঙ্করবাবু বলেন, “পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতর কৌশলে অভিযুক্তদের বাঁচাতে চাইছে। তিনদিনের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে দলের তরফে ইটাহারে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হবে।”
এদিন সিপিআই-র জলপাইগুড়ি জেলা সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “গত সোমবার ইটাহার কলেজের ঘটনার পর থেকে গৌতমবাবু তিন রকম সাফাই দিয়েছেন বলে শুনেছি। বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ দেখলে প্রমাণ হবে, সত্যি ঘটনা কি ওঁর কথার গুরুত্ব দিচ্ছি না। ওই দিন আমি মারা যেতে পারতাম। গণতন্ত্র বাচাও কমিটির লোকজন মারা যেতে পারত।”