এইমস নিয়ে বাম-তৃণমূলকে বিঁধলেন সনিয়া

ভোটের লড়াইয়ে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি আগেই তরজার বিষয় হয়ে উঠেছিল। মঙ্গলবার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর বক্তব্যেও উঠে এল এইমস প্রসঙ্গ। উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ার ইকরচলা মাঠের সভায় এইমস নিয়ে রাজ্যের বর্তমান তৃৃণমূল সরকারের সঙ্গে বিঁধলেন পূর্বতন বাম সরকারকেও।

Advertisement

গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৪
Share:

পাঞ্জিপাড়ার সভামঞ্চে দীপা দাশমুন্সি ও সনিয়া গাঁধী। তরুণ দেবনাথের তোলা ছবি।

ভোটের লড়াইয়ে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি আগেই তরজার বিষয় হয়ে উঠেছিল। মঙ্গলবার কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর বক্তব্যেও উঠে এল এইমস প্রসঙ্গ। উত্তর দিনাজপুরের পাঞ্জিপাড়ার ইকরচলা মাঠের সভায় এইমস নিয়ে রাজ্যের বর্তমান তৃৃণমূল সরকারের সঙ্গে বিঁধলেন পূর্বতন বাম সরকারকেও।

Advertisement

রায়গঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সির সমর্থনে মঙ্গলবার তাঁর খাসতালুক গোয়ালপোখর ব্লকে জনসভা করেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সভার শুরুতেই উত্তর দিনাজপুর জেলার পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন সনিয়া। উন্নয়ন নিয়েও রাজ্য সরকার রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এটা খুব দুঃখজনক। রাজ্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়নের কাজেও কেন্দ্রীয় সরকারকে বাঁধা দিয়েছে। আপনারা জানেন আমাদের ইউপিএ সরকার রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির মঞ্জুরি দিয়েছে। কিন্তু আগের বামফ্রন্ট সরকার ও বর্তমানে তৃণমূল সরকার হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করেনি।” রায়গঞ্জের উন্নয়নের জন্য প্রিয়রঞ্জনের অবদানের কথা বলে দীপাদেবীকে জেতানোরও আবেদন জানান সনিয়া।

শুধু এইমস প্রসঙ্গ নয়, একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়েও রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন সনিয়া। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের সঠিকভাবে একশো দিনের কাজ করতে পারেনি। গ্রামের মানুষকে কাজের খোঁজে যাতে দূরে যেতে না হয়, তাঁরা বাড়ির পাশেই যাতে কাজ পান, তার জন্যই আমরা একশো দিনের প্রকল্প শুরু করেছি। কিন্তু রাজ্য সরকার ঠিকভাবে ১০০ দিনের কাজ কার্যকরী করলে রায়গঞ্জের মানুষকে কাজের খোঁজে বাইরে যেতে হত না। আসলে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার ও বর্তমান তৃণমূল সরকার এ রাজ্যে কোনও উন্নয়নেরই কাজ করেনি।”

Advertisement

কংগ্রেস নেত্রীর এইমস প্রসঙ্গে মন্তব্যকে ‘বিভ্রান্ত’ করার চেষ্টা বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অমল আচাযর্। তিনি বলেন, “ইউপিএ সরকারের একাধিক মন্ত্রী দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে অভিযুক্ত হয়েছেন। ১৫ বছর ধরে কংগ্রেস রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রটি ধরে রাখলেও মানুষকে ভাঁওতাবাজি, ধোকা ও মিথ্যা কথা বলা ছাড়া কিছুই করেনি। রাজ্য সরকার জোর করে কৃষিজমি নষ্ট করে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরি করবে না। একের পর এক দুর্নীতি করায় জেলায় কংগ্রেসের পালে হাওয়া নেই। সেই কারণেই তিনি দিল্লি থেকে উড়ে এসে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে চলে গেলেন।” রায়গঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমের প্রতিক্রিয়া, “এইমসের ধাঁচের হাসপাতালের কথা কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বা স্বাস্থ্য বাজেটে নেই। ভোট এলেই কংগ্রেসের নেতা নেত্রীরা এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির ভাঁওতা দিয়ে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। সনিয়া গাঁধীও এ দিন তাই করলেন। তিনি ভোটের রাজনীতি করতেই প্রতি বছর লোকসভা নির্বাচনের মুখে রায়গঞ্জে আসেন।”

উন্নয়ন নিয়ে বাম এবং তৃণমূলকে আক্রমণের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে বিজেপিকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার দখল করতে, বিজেপি দেশজুড়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রচার চালাচ্ছে। তাঁর কথায়, “এ সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের হাতে ক্ষমতা এলে দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে না। মনে রাখবেন এটা রাজ্যের নয় দেশের নির্বাচন। কোনও সাম্প্রদায়িক দল নয়। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে পারে, মানুষের জন্য লড়াই করতে পারে, দেশে এমন একটা সরকারের দরকার রয়েছে। তাই আপনারা দীপাকে ভোট দিন।” এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি শুভ্র রায়চৌধুরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর আসন দখলের স্বার্থে বিজেপি কোনও মিথ্যাচারের রাজনীতি করে না। লাগামহীন দুর্নীতি ও ব্যর্থতা আড়াল করতেই বিজেপির নামে অপপ্রচারের রাজনীতি করছেন।”

এ দিনের সভায়, গত ১০ বছরে ইউপিএ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরেন সনিয়া। কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরলে কী পদক্ষেপ নেবে তাও জানান তিনি। বিশ্বজোড়া মন্দা সত্ত্বেও দেশে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ভাল বলে তিনি দাবি করেছেন।

এ দিন দুপুর সওয়া ১টা ১০ মিনিটে কংগ্রেস নেত্রী হেলিকপ্টারে চেপে পাঞ্জিপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের হেলিপ্যাডে নামেন। সঙ্গী ছিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ। বিএসএফ ক্যাম্প থেকে গাড়িতে চেপে সনিয়া ও শাকিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের একরচালা এলাকার ওই মাঠে পৌঁছন। পনেরো মিনিটের বক্তৃতার শেষে ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সনিয়া ও শাকিল রওনা হয়ে যান।

হেলিপ্যাড লাগোয়া বিএসএফ ক্যাম্পের একটি ভবনে দুপুর ২টা থেকে প্রায় ৫০ মিনিট সনিয়া ও শাকিল দীপাদেবী, জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত, দলের বিধায়ক গোলাম রব্বানি-সহ জেলা কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement