সাংবাদিক বৈঠকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলল দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। কামরাঙ্গাগুড়ি এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর মিনি সচিবালয় ‘উত্তরকন্যা’ নির্মাণ কাজে, সাহুডাঙি থেকে বেলাকোবা পর্যন্ত যে রাস্তার কাজ হচ্ছে সে সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছে তারা। বৃহস্পতিবার হিলকার্ট রোডে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে ওই অভিযোগ তোলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য। তিনি দাবি করেন, এ ক্ষেত্রে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা আইআইটি’র মতো সংস্থাকে দিয়ে বিশেষ অডিট করানো হোক। তাঁর দফতরের কাজ নিয়ে অভিযোগ তোলায় ক্ষুব্ধ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “উনি ভিত্তিহীন নানা অভিযোগ তোলেন। সে সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া জরুরি বলে মনে করি না। আমার দফতরের কাজ যথাযথ নিয়মে ‘ভেটিং’ করিয়ে হয়। অশোকবাবুর সে সব জানা নেই বলে তিনি নানা কথা বলছেন।”
অশোকবাবু অভিযোগ করেছেন, উত্তরকন্যায় নির্মাণ কাজে মাত্রাতিরিক্ত টাকা খরচ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। অথচ যে কাজ হয়েছে তার জন্য ওই বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ের কথা নয়। সেই সঙ্গে সাহুডাঙি থেকে বেলাকোবা পর্যন্ত রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। অশোকবাবুর দাবি, “সম্প্রতি দফতরের বাস্তুকার কাজের মান পরীক্ষা করতে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। সেই কারণে তাঁকে বদলি করা হয়েছে। ওই কাজ নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই আমাদের আশঙ্কা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা আইআইটি’র মতো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অডিট করানো দরকার।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী জানান, ভুল বলছেন অশোকবাবু। যে বাস্তুকার ওই রাস্তার কাজ দেখছেন তাঁকে বদলি করা হয়নি। তাঁর পদোন্নতি হয়েছে।
অন্য দিকে এসজেডিএ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে ফের অবস্থান বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জেলা বামফ্রন্ট। ৫ মে বেলা ৪টা থেকে ২ ঘন্টা এসজেডিএর সামনে অবস্থান বিক্ষোভ হবে। বৃহস্পতিবার জেলা বামফ্রন্টের তরফে এ কথা জানানো হয়। অশোকবাবু বলেন, “সিবিআই তদন্তের দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম। লোকসভা নির্বাচনের জন্য আন্দোলন বন্ধ ছিল। ফের আমরা এই দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাব।” এ দিন জেলা বামফ্রন্টের বৈঠকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈকের পর বামেদের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, শিলিগুড়ি পুরসভায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের বোর্ড গড়ে। দুই দলের কাউন্সিলরদের একাংশ প্রাসাদোপম বাড়ি বানিয়েছেন, প্রচুর টাকার মালিক হয়েছেন। কী করে তাঁরা এই সময়ে এত টাকার মালিক হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুরসভার কাজকর্ম বিশেষ অডিট করার দাবি তোলেন বামেরা। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বলেন, “পুরসভার কোনও অর্থ তছরূপ হয়নি এটা বলতে পারি। তা ছাড়া আমাদের দলের কোনও কাউন্সিলর অন্যায় ভাবে টাকা রোজগার করেছেন বলে জানা নেই।” বামেদের অভিযোগ, অবৈধ নির্মাণ কাজে মদত দিতে আর্থিক লেনদেন হচ্ছে। এ সব নানা দুর্নীতি, বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল পুরসভায় বামেদের তরফে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। আগামী অক্টোবরে মেয়াদ ফুরনোর আগে পুরসভার নির্বাচন করার দাবিও তোলেন তারা।
এ দিন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়েছে আসন্ন শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষেদর ভোটে বামশরিকরা জোটবদ্ধ ভাবে লড়বেন। আসনবিন্যাস নিয়ে যে খসড়া প্রস্তাব তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে বামেদের আপত্তি আছে। তারা জানান, শাসক দলের মদতেই প্রশাসন ওই তালিকা তৈরি করেছে বলে তাদের সন্দেহ। কারণ খসড়া তালিকা তৈরির আগে সর্বদল বৈঠক করা হয়নি।