শিব চতুর্দশী উত্সবের আনন্দ হারিয়ে গেল শোকের আবহে। মঙ্গলবার দিনভর ভেজা চোখে সময় কাটল ময়নাগুড়ির পদমতি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোলানাথ থান এলাকা বাসিন্দাদের। সুনসান মন্দির চত্বর ঘিরে পাহারা দিল পুলিশ। জমির মালিকানা নিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে এক পরিবারের বিবাদের জেরে সোমবার রাতে ওই মন্দিরের পাশে খুন হয়ে যান উত্সবের অন্যতম আয়োজক সেবাদাস ঋষি (৪৫)।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করার পরে তৃণমূল সমর্থক অভিযুক্ত পরিবারের লোকজন নিজেদের বাড়ির খড়ের স্তূপে আগুন লাগিয়ে দেয়। বন্ধ হয়ে যায় পুজোর আয়োজন। ঘটনায় ১২ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে চার জনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অভিযুক্ত পরিবারের এক মহিলা-সহ দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম শান্তিবালা রায় এবং রামদয়াল রায়।
জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “মন্দিরের জমির মালিকানা নিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে এক পরিবারের ঝামেলা হয়। ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।” মন্দির লাগোয়া বাড়িতে থাকেন শান্তিবালাদেবীরা। পুজো কমিটির পক্ষে শক্তিপদ রায় জানান, ৩৫ বছর থেকে মন্দিরকে ঘিরে শিব চতুর্দশী উত্সবের আয়োজন চলছে। গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ পুজোর সঙ্গে জড়িত। কয়েক বছর হল শান্তিবালাদেবীরা দাবি করতে শুরু করেন, বাড়ির সামনে মন্দিরে গ্রামের বাসিন্দারা উত্সব করতে পারবে না। তাঁরা পুজোর আয়োজন করবেন। গত বছর বিবাদ মেটাতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ বার ফের একই সমস্যা দেখা দিলেও বাসিন্দা ওই পরিবারের কথায় কর্ণপাত না করে উত্সবের আয়োজন করেন। কিন্তু সোমবার রাতে মন্দিরে শিবের মূর্তি নিয়ে যেতে গেলেই শুরু হয় গোলমাল। মৃত সেবাদাসবাবুর ভাই শিবু ঋষি বলেন, “শান্তিবালাদেবীর পরিবারের লোকজন ঢিল ছুড়তে থাকেন। ওই সময় মন্দিরে বেশি মহিলা ছিলেন। আচমকা মহিলাদের মারধর শুরু হলে দাদা এগিয়ে যান। ওই সময় তাঁকে কুড়ুল দিয়ে কোপানো হয়।”
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মৃত্শিল্পী স্বপন রায় অভিযোগ করেন, বাবলু রায় ও তপন রায় নামে দু’জনকে বাড়িতে আটকে শান্তিবালাদেবীর স্বামী বীরনারায়ণ রায় মারধর শুরু করেন। খবর পেয়ে বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে তুমুল মারপিট শুরু হয়। শান্তিবালাদেবীর শ্বশুর মধুসূদন রায় এবং স্বামী জখম হন। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সদর হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় ওই দুই অভিযুক্তের চিকিত্সা চলছে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগে অভিযুক্তরা বাড়ির খড়ের স্তূপে আগুন দেয়। ময়নাগুড়ি থেকে দমকলের দুটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য রীনা রায় বলেন, “পরিবারটির অদ্ভুত মানসিকতা। গ্রামের লোকজনের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে পারে না।” মঙ্গলবার উত্সবের দিনও থমথমে ছিল এলাকা। শান্তিবালাদেবীদের বাড়ি ফাঁকা। উঠোনে তাজা রক্তের ছাপ দেখা গিয়েছে এ দিনও। সামান্য দূরে সেবাদাস ঋষির বাড়িতে গোটা গ্রাম ভেঙে পড়ে। বেলা যত গড়িয়েছে ততই বেড়েছে শোক। বিকেলে সেবাদাস ঋষির দেহ গ্রামে পৌঁছতে গোটা গ্রাম কান্নায় ভেঙে পড়ে।