আলুর দাম তলানিতে, ক্ষতির মুখে চাষি

এ বছর আলুর দাম তলানিতে ঠেকায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। পাইকারি বাজারে আলু যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। উত্তরবঙ্গের মধ্যে আলু উৎপাদনে অন্যতম ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

Advertisement

নিলয় দাস

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

এ বছর আলুর দাম তলানিতে ঠেকায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। পাইকারি বাজারে আলু যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না কৃষকেরা। উত্তরবঙ্গের মধ্যে আলু উৎপাদনে অন্যতম ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির চাষিদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।

Advertisement

গত বার খোলা বাজারে আলুর দাম আকাশছোঁয়া ছিল। অসমে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজ্য সরকার। তিন সপ্তাহ আগে অসমে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গিয়েছে। ওই রাজ্যেও উত্তরবঙ্গের আলুর চাহিদা না থাকায় দাম আরও তলানিতে ঠেকার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুই ব্লকের প্রায় ষাট শতাংশ জমিতে এ বার আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সে ভাবে ধসা থাবা বসাতে পারেনি। গত বারের তুলনায় উৎপাদনও অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি আধিকারিকেরা। ফালাকাটা ব্লক কৃষি আধিকারিক আবু বক্কর সিদ্দিকি বলেন, “যে ধরণের আবহাওয়া বর্তমানে রয়েছে তা আলু চাষের পক্ষে অত্যন্ত অনুকূল। ফলনও ভাল হচ্ছে।”

Advertisement

তবে উৎপাদনের পর দিনের পর দিন বাজার যে ভাবে তলানিতে ঠেকছে তাতে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের মধ্যে কয়েকজন জানিয়েছেন, তিন বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে ১০ টন আলু উৎপাদন হচ্ছে। যার দাম বর্তমানে ৪২ হাজার টাকা। গত বছর এই সময়ে সম পরিমাণ আলুর দাম ছিল এক লক্ষ টাকার বেশি। তিন বিঘা আলুর জন্য বীজ, সার ও রাসায়নিকের উপর খরচ হয়েছে গড়ে ৭৫ হাজার টাকা।

কৃষকদের থেকে আলু কিনে যে সব ব্যবসায়ী অসমে আলু রফতানি করেন তাঁরা জানান, পশ্চিমবঙ্গের আলু যাওয়া বন্ধ হওয়ার পরে পঞ্জাব থেকে ওই রাজ্যে আলু পাঠানো হত। তবে এ বার অসমের বহু চাষি তাঁদের জমিতে ব্যাপক হারে আলু চাষ করছেন। ওই রাজ্যের ব্যবসায়ীরা মূলত সেখানকার কৃষকদের থেকে আলু কিনছেন। পশ্চিমবঙ্গের আলুর চাহিদা একেবারে নেই বললেই চলে। ধূপগুড়ি পটেটো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বপন দত্তের কথায়, “অসমে যে ভাবে আলু চাষের এলাকা বাড়ছে, তাতে এখানকার আলুর দাম তলানিতে ঠেকেছে। তবে ওই রাজ্যের আলু কমে এলে হয়তো দাম বাড়বে।” বিষয়টি নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি করেছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মার্চের আগে হিমঘর খুলবে না। এই সময় কৃষকদের পাশে সরকারের দাঁড়ানো প্রয়োজন।

ফালাকাটার জয়চাঁদপুর গ্রামের কৃষক তারক বর্মন নিজের দুই বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছেন। আলু বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি। তারকবাবুর কথায়, “অনেক আশা নিয়ে চাষ করেছি। বাজারে দাম মিলবে না, ভাবতে পারিনি।”

তবে পাইকারি বাজারে দাম কম মিললেও ফালাকাটা ও ধূপগুড়ির খুচরো বাজারে আলু কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। লাল হল্যান্ড আলু দুই বাজারে ১০-১২ টাকা কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। সাদা জ্যোতি আলু ৮-৯ টাকা দামে মঙ্গলবার বাজারে বিক্রি হয়েছে। ফালাকাটার সবজি বিক্রেতা সমীর সাহা বলেছেন, “কিলো প্রতি কিছু বেশি দাম নিতেই হবে। কেনার পরে বহু নষ্ট আলু ফেলে দিতে হয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement