পরিচর্যা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় গত বছর মার খেয়েছিল আমের উৎপাদন। ফলে,লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছিল গোটা মালদহ জেলার আম চাষিদের। সেই ক্ষতে এবার প্রলেপ পড়ার সম্ভাবনা। উদ্যান পালন দফতরের কর্তাদের দাবি, এবার জেলায় আম গাছগুলিতে ব্যাপকহারে মুকুল এসেছে। গত বছর গুলির তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। তাই প্রাকৃতিক কোনও দুর্যোগ দেখা না দিলে এই বছর আম উৎপাদন বিগত বছরের সমস্ত রের্কডকে ছাপিয়ে যাবে বলেই তাঁদের আশা। এই বছর এখনও পর্যন্ত শোষক পোকার আক্রমণের প্রকোপ তেমন নেই। তাই সব ঠিক থাকলে গত বছরের ক্ষতি এবার অনেকটাই পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
গত বছর দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল ঠাণ্ডা। তাই বহু গাছে মুকুল আসতে দেরি হয়েছিল। আবার কুয়াশার দাপটে প্রায় ৪০ শতাংশ গাছে মুকুলই আসেনি। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গত বছর জেলায় আমের উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ১ লক্ষ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে ২০১৩ সালে রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদন হয়েছিল মালদহে। সেই বছর মুকুল তেমন না আসলেও প্রাকৃতির দূর্যোগ না হওয়ায় মুকুলের বিশেষ কোনও ক্ষতিও হয়নি। ফলে, প্রায় ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। যা জেলায় সর্বকালীন রেকর্ড। এবার তাও ছাপিয়ে যাবে বলে অনুমান উদ্যান পালন দফতরের কর্তাদের।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শীত সময়ে বিদায় নিতে শুরু করায় চলতি বছর জেলায় ৯০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় মুকুল ঝরে পড়েনি। এই সময় শোষক পোকার আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এবার চাষিরা আগে থেকে সর্তক থাকায় শোষক পোকার হানা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। উদ্যান পালন দফতরের জেলা অধিকর্তা প্রিয়রঞ্জন সন্নিগ্রাহী বলেন, “চাষিরা ঠিক মতো গাছের পরিচর্যা করায় এবার ব্যাপক পরিমাণে আমের মুকুল এসেছে। আশা করি উৎপাদনও ভাল হবে। বছর তিনেক ধরে শোষক পোকার আক্রমণকেও অনেকটাই রোখা গিয়েছে।” উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর মালদহ জেলায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছিল। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার হেক্টরে। জেলার মধ্যে ইংরেজবাজার, মানিকচক, এবং রতুয়া ১ ও ২ নম্বর ব্লকে সবথেকে বেশি আম চাষ হয়। গাজল, বামনগোলা ও চাঁচলেও আমচাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে। আমের মুকুল ধরে রাখার জন্য দফতরের তরফেও লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। এবার ফলন বাড়ার সম্ভাবনায় খুশি জেলার আম চাষিরাও। ইংরেজবাজারের মধুময় সরকার, মানিকচকের মাধব মন্ডলরা বলেন, “গত বছর আবহাওয়ার জন্য আম উৎপাদন কম হয়েছিল। আমাদের প্রচুর টাকার ক্ষতি হয়েছিল। এবারে গাছে যা মুকুল এসেছে এবং আমাদের দফতরের কর্তারা যে ভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে গতবারের ক্ষতি কিছুটা মিটতে চলেছে।”