আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই।
আলিপুরদুয়ার থেকে ভুটানের ফুন্টশিলিং শহরটা বেশি দূরে নয়। নবীন চক্রবর্তী, রমেশ রায়, বিপুল সাহাদের মতো অনেকেই কর্মসূত্রে ফুন্টশিলিংয়ে রোজই যাতায়াত করেন। সপ্তাহান্তে চৌপথীর আড্ডায় তাঁরা আক্ষেপ করেন, ‘ফুন্টশিলিং শহরটা যদি এত সাজানো হতে পারে, তা হলে আলিপুরদুয়ার কেন হতে পারে না?’ প্রশ্নের উত্তর মেলে না।
অবশ্য মিলবে কী করে? একটা এত পুরানো শহরে জঞ্জাল ফেলার কোনও সুবন্দোবস্ত এখনও হয়নি। ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে সমস্যায় জেরবার সকলে। কোনও একটা জায়গায় আবর্জনা ফেলার সিদ্ধান্ত হলে সেখানকার বাসিন্দারা রুখে দাঁড়ান। শহরের বাইরে হলে সেখানকার বাসিন্দারা আপত্তি করেন। অথচ ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য জমি কেনাও হয়েছে। স্থানীয় লোকজনদের একাংশের বাধায় তাতে জঞ্জাল ফেলার কাজ শুরু করাতে পারেনি পুরসভা।
ষাটের দশকে পুরসভা শহর সংলগ্ন চেকো এলাকায় প্রায় ১৮ বিঘা জমি কেনে। পুরসভার নজরদারির অভাবে তা দখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি সলসলবাড়ির কাছে পুঁটিমারি এলাকাতে পুরসভা ২২ বিঘা জমি কিনেছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা বাধা দেওয়ায় সেখানেও ডাম্পিং গ্রাউন্ড করতে পারেনি পুরসভা। আপাতত শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চলছে অস্থায়ী ভাবে জঞ্জাল ফেলার কাজ।
এর আগে আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ, সবই কালজানি নদীতে ফেলা হতো। তাতে উদ্ভিদ থেকে মাছের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবেশবিদদের প্রতিবাদের পরে ২০১২ সালে শহরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জায়গা না থাকায় প্রায় এক মাস শহরের ময়লা তোলার কাজ বন্ধ রাখেন তত্কালীন পুর কর্তৃপক্ষ। সেই সময় পুঁটিমারি এলাকায় ২২ বিঘে জায়গা কেনা হয় গদাধর নদীর পাশে।
তবে স্থানীয় গ্রামবাসীরা এলাকায় ময়লা ফেলতে বাধা দেওয়ায় সেখানেও ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করা যায়নি। পরে সর্বদল বৈঠক করে শহরের চার নম্বর ওয়ার্ডে অস্থায়ীভাবে ময়লা ফেলার কাজ চলছে। সেখান মশা মাছির উপদ্রব ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন বাসিন্দারা। তবে এখনও জঞ্জাল ফেলার জয়াগার স্থায়ী সমস্যার সমাধান করতে পারেননি পুরকর্তৃপক্ষ। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডেও ময়লা ফেলার নিদিষ্ট জায়গা নেই বলে অভিযোগ। ফলে বাসিন্দারা বাড়ির নিত্য দিনের আবর্জনা রাস্তা ঘাটে ফেলছেন। এতে যত্রতত্র পড়ে থাকছে আবর্জনা।
আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের চেয়ারম্যান অমল দত্ত বলেন, “আগামী দিনে জঞ্জাল সমস্যা প্রকট আকার নেবে আলিপুরদুয়ারে। শহরে ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়নি। তবে রান্না করা জিনিস থেকে শাকসবজির খোসার মতো পচনশীল জিনিস ও প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস পুরসভা বাড়ি বাড়ি সংগ্রহের সময় আলাদা করলে সমস্যা অনেকটা মিটতে পারে।” তিনি জানান, পচনশীল জিনিস দিয়ে জৈব সার তৈরি করে তা বিক্রি করা যেতে পারে এবং প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস গুলি রিসাইক্লিংয়ের জন্য বিভিন্ন কারখানায় পাঠানো যেতে পারে।
দূষণে নাকাল বাসিন্দারা।
মানবিক মুখের সম্পাদক রাতুল বিশ্বাস বলেন, “১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁধের পাড় এলাকায় গজিয়ে ওঠা বস্তিগুলির পাশে পুরসভার তরফে শৌচাগার তৈরির প্রয়োজন রয়েছে। এলাকার কিছু বাসিন্দারা তাদের দৈনন্দিক শৌচকর্ম নদীর পাশে করায় এলাকায় দুষণ ছড়াচ্ছে। নদীর পাশে গাছ লাগিয়ে বসবার জায়গা করলে সবুজ শহরের উদ্দেশ্য অনেকটাই বাস্তবায়িত হবে। শহরের বিভিন্ন সংগঠন মিলে সবুজ শহরের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শহরকে পরিষ্কার রাখা, ঝিল সংস্কার সহ নানা বিষয় নিয়ে পুরসভার চেয়ারম্যানকে দাবি জানানো হয়েছে।”
আলিপুরদুয়ারের শহরের এই সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান বাবলু দত্ত। তিনি জানান, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। প্রাক্তন চেয়ারম্যান দীপ্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আবর্জনা থেকে সার তৈরির প্রস্তাব ভাল। যেখানেই হোক জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়া দরকার। সেখানে প্রশাসনকেও উদ্যোগী হয়ে কাজ শুরু করাতে হবে।
—নিজস্ব চিত্র।
(শেষ)