মদনমোহন দেবের ছবি সংবলিত রুপোর স্মারকের পর এ বার রাসচক্রের কাঠের টুকরো ‘সংরক্ষণের’ সুযোগ পাচ্ছেন কোচবিহারের বাসিন্দারা। সম্প্রতি রাসচক্রের মূল দণ্ড হিসাবে ব্যবহৃত নষ্ট হয়ে যাওয়া পুরনো ওই কাঠ টুকরো টুকরো করে ভক্তদের মধ্যে বিক্রির জন্য অনুমতি দিয়েছে আদালত। কোচবিহারের জেলা ও দায়রা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত দেবোত্তর ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষকে ওই নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত ও ট্রাস্ট সূত্রের খবর, প্রায় ৩৪ ফুট উঁচু রাসচক্রের পুরনো শালকাঠটিকে মূলদণ্ড হিসেবে বসিয়ে প্রতি বছর রাসচক্র তৈরি করা হয়। টানা ২৫ বছর ধরে তা ব্যবহারের জেরে কাঠের একাংশ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গত বছর বিষয়টি ট্রাস্ট কর্তাদের নজরে আসে। সে বার কোনও রকমে মেরামত করে কাজ চালানো হয়। কিন্তু ঝুঁকি এড়াতে তারপরেই নতুন কাঠ দিয়ে রাসচক্র তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়। ট্রাস্টের এক কর্তা জানান, রাসচক্রের কাঠটি আড়াআড়িভাবে ভেঙে গিয়েছিল। ভাঙা কাঠ দিয়ে চক্র তৈরি হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। আগেও অন্তত দু’বার চক্রের কাঠ বদলানো হয়েছে। এবার আগেই বন দফতরের কাছে নির্দিষ্ট মাপের কাঠ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
অন্য দিকে, পুরনো কাঠটি বিক্রি করার জন্য অনুমতি চেয়ে আর্জি জানান ট্রাস্ট কর্তারা। তার প্রেক্ষিতেই আদালত ১০ টাকা ও ২০ টাকা দরে প্রতি টুকরো হিসেবে কাঠটি বিক্রির অনুমতি দেয়। ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য, কোচবিহারের সদর মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা জানান, পুরীর জগন্নাথদেবের রথের কাঠ টুকরো টুকরো করে ভক্তদের বিক্রির রেওয়াজ রয়েছে। তা সংগ্রহের চাহিদাও ব্যাপক। রাসচক্রের ক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হবে। তবে রাসচক্রের ওই কাঠটি কতগুলি টুকরো হতে পারে তা নিয়ে এখনও কোনও হিসেব নিকেশ হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোচবিহার জেলা আদালত সূত্রেই জানা গিয়েছে, আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে রাসচক্রের ওই কাঠটির কতগুলি টুকরো করা হল, কতগুলি বিক্রি হল সে সব সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আদালতে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই কাঠ টুকরো করার সময়ে সরকার ও প্রতিপক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। দেবোত্তর ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, রাসচক্র ঘুরিয়ে দু’শো বছরের প্রাচীন কোচবিহার রাস উৎসবের উদ্বোধন হয়। কোচবিহারের মহারাজা ওই চক্র ঘোরাতেন। এখন দেবোত্তর ট্রাস্টের সভাপতি হিসাবে জেলাশাসকেরা ওই রাসচক্র ঘোরান। শহর লাগোয়া হরিণ চওড়া এলাকার বাসিন্দা আলতাফ মিঁয়া বংশানুক্রমিকভাবে ওই রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব সামলান। প্রতিবছর রাসের সময় ওই চক্র ঘোরানোর জন্য উৎসাহী মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। এমনকি উদ্বোধনের পর চক্র ঘোরাতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।