নতুন জেলার খুশিতে অকাল দীপাবলি। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
হঠাৎ আলিপুরদুয়ারে এসে পৌঁছলে মনে হতে পারে পুজো বুঝি চলেই এসেছে। দোকানপাটে রঙিন আলো। বাহারি আলো ঘরদোরেও। আলোর রোশনাই রাস্তায়। দলবেঁধে তুবড়ি জ্বালিয়ে মাতোয়ারা জনতা। কেউ পটকা ফাটাচ্ছেন উচ্ছ্বাসে।
অকাল-পুজো, অকাল দীপাবলির এই আবহ এনে দিয়েছে নতুন জেলা হওয়ার খুশি। আর সেই খুশিতে সামিল হওয়ায় নেই দলের বিভাজন। শহর জুড়ে নানা এলাকায় মাইকে বাজছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। বাজছে বাংলা ব্যান্ডের গানও। মিষ্টির দোকানে উপচে পড়ছে ভিড়। আলিপুরদুয়ারকে আজ, বুধবার জেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তা উদযাপনের আনন্দ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে গোটা শররটাই।
জেলা হওয়া নিয়ে উন্মাদনা কতটা বোঝা গেকল হাসপাতালে। চিকিৎসাধীনদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ করে ছুটি করিয়েছেন। কারণ, সকলেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে চান। গত সোমবার থেকে প্রবল জ্বর নিয়ে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী দুলাল সাহা। মঙ্গলবার বিকালে জ্বর কিছুটা কমলেও ছাড়া পাননি। তবে এখন তিনি আক্রান্ত জেলা-জ্বরে! দুলালবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার সাক্ষী হওয়া থেকে বঞ্চিত হতে রাজি নই। নিজেই বন্ড দিয়ে ছুটি নেব। চিকিৎসক বলেছেন ছুটি দেবেন।” এমন আরও কয়েকজন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়েছেন বলে খবর।
নতুন জেলার খুশিতে কেক। ছবি: নারায়ণ দে
কিশোরী বর্ণিতা দত্ত থেকে ৭৪ বছরের ডাবলু মুখোপাধ্যায় আপ্লুত সকলেই। মোমবাতির আলোয় ঘর সাজিয়েছেন বাসিন্দারা। রিক্সাচালকেরা আনন্দে ভাড়া নিয়ে মন কষাকষি করতে চাইছেন না। শুধু আলিপুরদুয়ার শহরই বাসিন্দারা নন, গোটা মহকুমার মানুষই আজ জেলা হওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা।
কুমারগ্রাম, জয়গাঁ, কালচিনি, বীরপাড়া, ফালাকাটা, শামুকতলার মানুষও উৎসব পালন করছেন। বুধবার আলিপুরদুয়ার শহরে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে জেলা ঘোষণার সাক্ষী হতে সকলেই আসবেন আলিপুরদুয়ারে। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, “মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনন্দে গা ভাসাচ্ছেন।”
জেলা হওয়ার খুশিতে আলোর সাজে ঝলমলে আলিপুরদুয়ার শহর। সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
আনন্দ মুছে দিয়েছে রাজনীতির রং। মুখ্যমন্ত্রী জেলা ঘোষণা করায় রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বামেদের অন্যতম শরিক দল আরএসপি শহরে ব্যানার টাঙিয়েছে। বাম পরিচালিত আলিপুরদুয়ার পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা আরএসপি নেতা গৌতম দাস বলেন, “আমাদের বহু দিনের দাবি আজ বাস্তবে রূপ পেতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।” কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকারও রাজ্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান। ইতিমধ্যে শহরের বেশ কয়েকটি দোকান মালিক সাইনবোর্ডে নতুন করে রঙ করে জেলা জলপাইগুড়ি মুছে আলিপুরদুয়ার লিখে সাঁটিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরে দুর্গাবাড়ি থেকে মহকুমাশাসকের দফতর পর্যন্ত পদযাত্রার ডাক দিয়েছিল পুরসভা। তাতে যোগ দেন আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়ও। উপস্থিত ছিলেন আরএসপির প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাসও। পদযাত্রা শেষে ব্যান্ডপার্টির তালে উচ্ছাসে নাচতে শুরু করেন মহিলা পুরুষ সকলেই।
বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কালচিনি ব্লকের মেন্দাবাড়ি জঙ্গল ক্যাম্পে ঢোকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’ধারে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে মহিলা পুরুষ সকলেই মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ মুকুল রায়,উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব, পূর্ত দফতরের মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী ছিলেন।