বিজেপি’র দার্জিলিং জেলার সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করার হুমকি দিলেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নান্টু পাল।
চলতি সপ্তাহেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যোগ দিয়েছেন তৃণমূল নেতা হরিসাধন ঘোষ। নান্টুবাবুর দাবি, দলবদল অনুষ্ঠানে সাংসদ দাবি করেছিলেন, তিনিও প্রার্থী হতে চেয়ে সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বৃহস্পতিবার রীতিমত সাংবাদিক বৈঠক করে নান্টুবাবু মানহানির মামলার কথা বলেছেন। এদিন দুপুরেই তিনি আদালতে নিয়ে তৃণমূল আইনজীবী সেলের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন কাজপত্রও তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
নান্টুবাবুর দাবি, “আজ অবধি সামনা সামনি সাংসদকে দেখিনি। বৈঠক করা বা টেলিফোনে কথা বলা তো দূরের কথা। উনি একজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে কীভাবে এই ধরণের মিথ্যা কথা বলেন, তা ভাবতে পারছি না।” তৃণমূল নেতা জানান, আমি নিজেও আইনজীবী। দলের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা তিনদিন দেখব, তার মধ্যে সাংসদ ওঁর বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আইন মেনে নোটিশ পাঠানো হবে। তার উত্তর সন্তোষজনক না হলে মানহানির মামলা করব।
বাম আমলে তৃণমূল নেতা নান্টুবাবু দীর্ঘদিন সিপিএমের কাউন্সিলর, বরো চেয়ারম্যানও ছিলেন। পরবর্তীতে প্রথমে তিনি তৃণমূল এবং তার পরে কংগ্রেসে যোগ দেন। কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ডেপুটি মেয়রও হন। পরবর্তীকালে তিনি ফের তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁকে পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। বিজেপি নেতাদের দাবি, দলবদল নান্টুবাবুর কাছে নতুন কোনও বিষয় নেই। তিনি ছয়বার ভোটে লড়াই করেছেন। সেই সময় তিনি নানা দলে ছিলেন। রাজ্য জুড়ে বিজেপি’র হাওয়া শুরু হওয়ায় অনেক তৃণমূল নেতাই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখা শুরু করেছেন। সাংসদ সেই কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, “আমি কোনও সময়ই বলিনি নান্টুবাবু আমার সঙ্গে দেখা করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বা টিকিট চেয়েছেন। হরিসাধনবাবু ছাড়া কে কে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তা জানতে চাওয়া হলে শুধু বলেছি, নান্টুবাবু যোগাযোগ করেছেন না করেননি, তা কি আপনারা জানেন? অথযা এটা নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।” আর মানহানির মামলা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “উনি তা করতেই পারবেন। ওটা নিয়ে ভাবার কিছুই নেই।”
নান্টুবাবুর দাবি, “শিলিগুড়ি শহরে আমার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। অবাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যেও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিজেপি’র প্রার্থী করার লোক খুঁজে পাচ্ছে না শিলিগুড়িতে। তাই আমার নাম হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে বিজেপি ভোটে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছিল।”
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য নান্টুবাবুর সঙ্গে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কাউকেই দেখা যায়নি। এই প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “দলের জেলা সভাপতি সব জানেন। আর আমাকে নিজের বক্তব্য বলার বা ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়র দল দিয়েছে। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি।”
দলীয় সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূলের রাজনীতিতে নান্টুবাবু রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিজের মত করে দল করেন। বিজেপি’র সাংসদের বক্তব্যের পর দলের মধ্যে চাপে পড়ে যান নান্টুবাবু। বিভিন্ন মহল থেকে তিনি ফের দলবদল করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে দলের নেতৃত্বকে জানানো হয়। দলের তরফেও নান্টুবাবুকে বিষয়টি পরিস্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কারণ, এবার পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাঁর স্ত্রী এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথাবার্তা চলছে।
তবে তা অস্বীকার করেছেন তিনি। নান্টুবাবুর কথায়, “আমার উপর কোনও চাপ নেই। আর আমার বা স্ত্রী’র প্রার্থী হওয়াটা দলের বিষয়। তবে দুটি ওয়ার্ড থেকে আমাদের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। আমার সাংগঠনিক প্রস্তুতিও শুরু করেছি।”
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে এক দফায় প্রচার শুরু করার কথাও বলেন নান্টুবাবু। তবে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ার প্রসঙ্গ আসতেই তিনি দাবি করেন, “বিশেষ ওয়ার্ডে নয়, গোটা শহরে প্রচার করছি। এদিন ১০, ১১ এবং ১২ নম্বরে গিয়েছিলাম। দলের কাজকর্ম তো চলছে।” টিকিট নিয়ে দলের অন্দরে বিক্ষোভের কথাও নান্টুবাবু স্বীকার করেছেন। বিশেষ করে ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক দাবিদারের প্রসঙ্গে। তিনি বলেন, “রঞ্জন শীলশর্মা এবং দীপক শীল প্রার্থী হতে চান বলে শুনেছি। দুই জনই যোগ্য নেতা। বাকিটা দল, জেলা সভাপতি ঠিক করবেন।”