চাঁদা তুলতে বেরিয়েছেন মহিলারা। — হিমাংশুরঞ্জন দেব
কারও রোজনামচা ছিল সকাল সাতটা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠা। সেই তিনিই এখন ভোরের আলো ফুটতেই পাঁচটার মধ্যে বিছানা ছাড়ছেন। দু’ঘণ্টায় সংসারের কাজ যতটা সম্ভব এগিয়ে রাখছেন।
কারও আবার দুপুরের রান্না সামলে রাতের জন্য নতুন খাবার তৈরি করাই ছিল অভ্যেস। তিনিই আপাতত সেই পথ মাড়াচ্ছেন না। এক বারের রান্নাবান্নার পাট চুকিয়ে খাবার ফ্রিজবন্দি করছেন। রাতে একটু গরম করে শুধু পরিবেশন।
এ ভাবেই ঘরকন্নার কাজের রুটিন বদলে সময় সাশ্রয় করছেন ওঁরা। কারণটা পুজো। চাঁদার রসিদ হাতে বেরোনো থেকে মণ্ডপ তৈরির তদারকি, সব কাজ সামলাচ্ছেন রাখি ভৌমিক, রিঙ্কু দত্ত, শীলা গোস্বামী, কৃষ্ণা কর্মকার, জয়শ্রী দেবনাথ, অজন্তা অধিকারী, ঝুমকি দে-রা।
কোচবিহারের রবীন্দ্রনগর এলাকায় ‘ইউনাইটেড বাজারের মাঠ’ কমিটির ব্যানারে দুর্গাপুজো করছেন এই বধূরাই। বাজারের মাঠ-ময়দান চত্বরে আয়োজিত মহিলা পরিচালিত ওই পুজোর এ বার তৃতীয় বর্ষ। অন্য কমিটিগুলির মতোই জোরকদমে শেষ মুহূর্তের পুজো প্রস্তুতি চলছে। মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমা, কোনও কিছুতেই খামতি রাখতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। মহিলা পরিচালিত ওই পুজো কমিটির সম্পাদিকা রাখি ভৌমিক বলেন, “এই পুজো আমাদের প্রাণ। পুজোকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলতে এতটুকু খামতি রাখতে চাইছিনা। সমস্ত রকম আয়োজনে যাতে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারি সেজন্য দু’বেলার রান্না একবারে করছি।”
দৈনন্দিন কাজকর্ম সেরে সময় বার করে পুজোর আয়োজন যে কতটা ঝক্কির, তা স্পষ্ট অন্যদের কথাতেও। পুজো কমিটির সদস্যা শীলা গোস্বামী বলেন, “রোজ সকালে অন্তত দু’ঘণ্টা আগে উঠছি। সংসারের কাজ গুছিয়ে দুপুর গড়াতেই চাঁদার রসিদ হাতে বেরোতে হচ্ছে।’’ তবে সংসারের রোজকার কাজ তাঁরা দশভুজার মতোই সামলান। তাই এই ঝক্কিও সামলানো তো তাঁদের কাছে কিছুই না। তাছাড়া, ‘‘পুজোর ধারাবাহিকতা রাখতে হবে তো!”, বলছেন শীলাদেবী। আরেক সদস্যা রিঙ্কু দত্ত বলেন, “সব বাড়ির ছেলেরাই অবশ্য এ সবে মানিয়ে নিয়েছেন।”
না মানিয়েই বা উপায় কী ছিল? বলছেন এলাকার বাসিন্দা কয়েকজন যুবক। তাঁরা জানিয়েছেন, শহর জুড়ে দুর্গাপুজোর ছড়াছড়ি হলেও বাজারের মাঠ ও লাগোয়া এলাকা ছিল অন্ধকারে। পুজোর সময় ওই পরিবেশ কেমন একটা অস্বস্তিকর মনে হত। এলাকার মহিলারা একজোট হয়ে ২০১৪ সালে পরিস্থিতি বদলে দেন। সেবার আয়োজন তেমন বড় কিছু না হলেও এখন পরিস্থিতি বদেলেছে। বেড়েছে বাজেটও।
উদ্যোক্তারা জানান, মহিলা পরিচালিত ওই পুজোয় এ বার মণ্ডপ হচ্ছে শান্তিনিকেতনের ‘ব্ল্যাক হাউসের’ আদলে। বাঁশের ধারা, মাটি, সিমেন্টের উপকরণে তৈরি মণ্ডপে উঠে আসবে শিল্পকর্মের ছাপ। রাতের আলো চোখ ধাঁধাবে। নজর কাড়বে ডাকের সাজের সাবেক প্রতিমাও।
এখন তাই মৃণ্ময়ী দশভুজার সেই সাজেরই তদারকে ব্যস্ত জীবনের দশভুজারা।