মানবিকতার স্বীকৃতি কি পাবেন পুলিশ কনস্টেবল খুকু

দাবি উঠেছে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের শিশু রাখার ব্যবস্থা নিয়েও। মণিদীপাদেবীর সংযোজন, রাজ্যে চাইল্ড কেয়ার লিভ চালু হয়েছে। তবে মায়েদের কর্মস্থলের কাছে সন্তানকে রাখার পরিকাঠামো নিয়েও ভাবা দরকার। প্রয়োজনে কর্মস্থল থেকে যাতে দ্রুত সন্তানের কাছে যাওয়া যায়।  

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২০
Share:

খুকু চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

গত বছর কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি আরজিএল হাইস্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের পরীক্ষায় দায়িত্ব সামলাতে গিয়েছিলেন মহিলা পুলিশ কনস্টেবল খুকু চট্টোপাধ্যায়। পরীক্ষা শুরুর তিরিশ মিনিটের মাথায় ভিন্‌ রাজ্যের এক প্রবীণার কোলে কাঁদতে থাকা ছোট্ট শিশুকে দেখে বুঝে গিয়েছিলেন খুদের চাহিদা। শিশুর ঠাকুমার অনুমতি নিয়ে নিজের ছোট্ট ছেলের মতোই ওই শিশুটিকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন তিনি। বিহারের বাসিন্দা সেই শিশুর মা তখন পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত। খুকুদেবীর ‘মানবিকতা’ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়েছিল। সম্প্রতি ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনার দেশ আর্জেন্টিনায় কর্তব্যরত অবস্থায় ক্ষুধার্ত শিশুকে স্তন্যপান করিয়ে মানবিকতার নজির গড়েন পুলিশ অফিসার সেলেস্তে জ্যাকেলিন আয়ালা। তিনি একটি হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তখন অপুষ্টিতে ভোগা শিশুটিকে হাসপাতালে আনা হয়। খিদেয় কাঁদছিল শিশুটি। তড়িঘড়ি অনুমতি নিয়ে সন্তানস্নেহে স্তন্যদুগ্ধ পানের ব্যবস্থা করেন তিনি। ওই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই আলোড়ন পড়ে। এর পরে ওই পুলিশ অফিসারকে সার্জেন্ট পদে উন্নীতও করা হয়।

Advertisement

খুকুদেবীদের জন্য এমন পুরস্কারের ব্যবস্থা কি করা যায় না? কোচবিহারের কর্মরত মহিলাদের অনেকে ওই প্রশ্ন তুলেছেন। সুনীতি অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস বলেন, ‘‘নজিরবিহীন উদারতার উদাহরণ তৈরি করেছিলেন খুকুদেবী। স্বীকৃতি দিলে অন্যেরাও উৎসাহিত হয়। এ নিয়ে ভাবা দরকার।’’ কোচবিহার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষিকা নবনীতা সিকদার বলেন, ‘‘একজন মায়ের পক্ষে অন্যের শিশুকে স্তন্যপান করানো মুখের কথা নয়। সেলেস্তার মত খুকুদেবীর জন্য স্বীকৃতির কথা এ দেশে সম্ভব কিনা, জানি না। তবে ভাবা যেতেই পারে।’’

দাবি উঠেছে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের শিশু রাখার ব্যবস্থা নিয়েও। মণিদীপাদেবীর সংযোজন, রাজ্যে চাইল্ড কেয়ার লিভ চালু হয়েছে। তবে মায়েদের কর্মস্থলের কাছে সন্তানকে রাখার পরিকাঠামো নিয়েও ভাবা দরকার। প্রয়োজনে কর্মস্থল থেকে যাতে দ্রুত সন্তানের কাছে যাওয়া যায়।

Advertisement

কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, ‘‘ওটা তো সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, গত বছর কোচবিহারের সদর ট্রাফিকের মহিলা কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন খুকুদেবী। এখন দিনহাটায় একই পদে চাকরি করছেন। বাড়িতে আড়াই বছরের ছেলে আলেখ্য, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ে অণুক্ষা রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে সাব ইনস্পেক্টরের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন খুকু। সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ায় ট্রেনিংয়ে যেতে পারেননি। পদোন্নতি তাই এখনও হয়নি। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, সার্ভিস বুকে ওই ঘটনার পরে ‘গুড সার্ভিস’ লেখা হয়। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিভাগীয় সংবর্ধনা হয়নি।

খুকুদেবীর কথায়, ‘‘একজন মা হিসেবে সেই সময়ে যা মনে হয়েছিল, সেটাই করেছি। অন্য কিছু ভাবিনি। আর্জেন্টিনার ঘটনায় আমি আপ্লুত। ওঁর সঙ্গে দেখা করার স্বপ্নও দেখছি।’’ সেই স্বপ্নে কোচবিহার আর বুয়েনস আইরেস মিলবে কিনা, সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement