কেন আসে বারবার লোকালয়ে চিতাবাঘ

যার জেরে সেবক রোডের মতো শিলিগুড়ির অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় আতঙ্ক বেড়েছে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০২:০১
Share:

মঙ্গলবার সেবক রোডের আড়াই মাইলের একটি আবাসনে দেখা মিলল চিতাবাঘের পায়ের ছাপের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

আবার চিতাবাঘ শহর লাগোয়া এলাকায়। সেই সেবক রোডেরই ধারে নির্জন গুদামঘরের ঝোপেঝাড়ে মিলেছে তার আনাগোনার চিহ্ন। আংশিক অন্ধ এক চিতাবাঘ ওই এলাকারই একটি মার্বেলের গুদামের ঝোপ থেকে খাঁচাবন্দি হয়। সেই ঘটনার পরে এক সপ্তাহও কাটেনি। এ বার আরেক চিতাবাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেল পাশেরই একটি গুদাম চত্বরে। যার জেরে সেবক রোডের মতো শিলিগুড়ির অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় আতঙ্ক বেড়েছে।

Advertisement

এ বারও চিতাবাঘটাকে ধরতে পাতা হয়েছে ফাঁদ, প্রয়োজনে গুলি করে ঘুম পাড়ানোর তোড়জোরও শুরু হয়েছে। কিন্তু, একটা-দু’টো চিতাবাঘ ধরলেই সমস্যা মিটবে বলে মনে করছেন না বন বিভাগের অনেকেই।

হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু জানাচ্ছেন, চিতাবাঘের লোকালয়ে ঢোকা আটকানোর দিকে নজর দেওয়ার চেয়েও বেশি প্রয়োজন তারা যাতে বনেই স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করা। পাহাড়ি জঙ্গল ও চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত সেবক রোড। সেখানে গা ঢাকা দিয়ে সহজেই শিকারের সুযোগ পেয়ে গেলে চিতাবাঘের মতো জন্তু বারেবারেই লোকালয়ে হানা দেবে বলেই মত অনিমেষবাবুর।

Advertisement

আবার আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের কর্ণধার অমল দত্তের মতে, ‘‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বন ও চা বাগান লাগোয়া আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ির মতো শহুরে জনপদে চিতাবাঘের আনাগোনা লেগেই থাকবে। সেখানে বিষ প্রয়োগ করে, পিটিয়ে, বিষাক্ত তির দিয়ে চিতাবাঘ মারার ঘটনাও ঘটে থাকে। স্রেফ জন্তুটিকে খাঁচায় পুরে অন্যত্র চালান করে স্থায়ী সমাধান হবে না।’’ তাই পরিবেশপ্রেমীদের সকলেই চান, বন দফতর দ্রুত দ্বিমুখী পদক্ষেপ করুক।

কী সেই পদক্ষেপ? প্রথমত, লাগোয়া এলাকার বনাঞ্চল, চা বাগানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা দরকার কত সংখ্যক চিতাবাঘ সেখানে থাকতে পারে। পাশাপাশি চিতাবাঘের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে হরিণ, খরগোসের মতো ছোট প্রাণী সেখানে রয়েছে কিনা তা দেখা হোক। দ্বিতীয়ত, চিতাবাঘ-মানুষ সংঘাত রুখতে লাগাতার প্রচার চালিয়ে ওই এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোর কর্মসূচি নেওয়া হোক। যা শোনার পরে বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন বলেন, ‘‘অফিসারদের কাছে বিশদে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সেই মত পদক্ষেপ করা হবে।’’

বন দফতরের অফিসাররাও জানান, শিলিগুড়ি শহরের সেবক রোড এমন জায়গায় রয়েছে যে তার লাগোয়া এলাকায় চিতাবাঘ সহজে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে। আর সেবক রোডের পূর্বদিকে দেড় কিলোমিটার গেলেই বৈকুণ্ঠপুরের বনাঞ্চল। উত্তর পশ্চিমে আড়াই কিলোমিটার দূরেই মহানন্দ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য। অন্যদিকে উত্তর পশ্চিমে শহরের গা ঘেঁষেই রয়েছে ছোট-বড় অন্তত ১০টি চা বাগান। কাছেই বৈকুণ্ঠপুরের শালুগাড়া, সেখানেও ছোট চা বাগানের সংখ্যা অন্তত ৪০টি।

দু’টি বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এক দশক আগেও ভোরে বা সন্ধ্যায় সেবকের দিকে যাতায়াত করলে হরিণ, বুনো খরগোশ দেখেছেন। ইদানীং যা প্রায় বিরল। তাতে অনেকের সন্দেহ, চোরাশিকারিদের দাপটে বনের হরিণ, খরগোশের সংখ্যা কমেছে। যার ফলে চিতাবাঘের খাবারে টান পড়েছে। আর খিদের চোটে ডুয়ার্স এলাকায় গোয়ালে হানা দিচ্ছে চিতাবাঘ। কিন্তু শিলিগুড়ির মতো পুর এলাকায় গোয়ালঘরের চল অনেক আগেই উঠে গিয়েছে। সেখানে বেওয়ারিশ পথ কুকুরের টানেই চিতাবাঘ ঝোপঝাড়ে ঘেরা গুদাম কিংবা নির্জন অব্যবহৃত ঘেরা জায়গায় ঘাঁটি করছে।

মহানন্দা বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের এক শীর্ষ অফিসার জানান, এক সপ্তাহ আগে সেবক রোডে চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি করার পরেই বৈকুণ্ঠপুর বনবিভাগ কয়েকটি গুদাম, অব্যবহৃত বাড়ির মধ্যে আগাছা, ঝোপঝাড় চিহ্নিত করে মালিকদের চিঠি দিয়ে তা সাফইয়ের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু, সেই নির্দেশ এখনও মানা হয়নি বলে বন দফতরের অনেকেই উদ্বিগ্ন। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘরদোর, গুদামঘরে কেউ গাছ লাগালে, ঝোপঝাড় তৈরি করলে তা পরিবশের পক্ষে ভালই। পরিবেশবিদরা তো গাছ লাগাতেই বলে থাকেন। বরং, চিতাবাঘ যাতে বনে নিরাপদে তাকতে পারে সে দিকে নজর দিক বন দফতর।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement