শিলিগুড়িতে বিক্ষোভ বিজেপির। — নিজস্ব চিত্র
রেল, রাস্তায় অবরোধ
বেলা ৮টা বাজতেই পথে নেমে পড়েন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। আলিপুরদুয়ার জেলা লাগোয়া অসম যাওয়ার রাস্তায় অবরোধ করেন। অবরোধের জেরে বন্ধ হয়ে যায় ভুটান সীমান্তও। অবরোধস্থল থেকে সৌরভকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বিজেপির কোমর ভেঙে দিতে হবে। বিজেপির কেউ এলাকায় বাড়াবাড়ি করলে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’’ এর পরে ১০ মিনিটের জন্য রেল অবরোধও হয়। আটকে পড়ে গুয়াহাটি-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস। সৌরভবাবুর বক্তব্য, ‘‘বিজেপি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে। তাই রাজনৈতিক ভাবে কোমর ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছি। বিজেপি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে বলেই তাড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ এসেছে।’’ তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং বন্ধ-অবরোধের বিরোধী। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌরভবাবু বলেন, “কেন্দ্র সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছে। সেটা সকলের নজরে আনার জন্যই এই আন্দোলন।” দলনেত্রীর নির্দেশে আজ, বৃহস্পতিবার অসমে গিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে নামবেন সৌরভবাবু।
বিজেপির ফালাকাটা ব্লক পার্টি অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি-র ফালাকাটা ব্লক সভাপতি ফণীন্দ্র দেবের অভিযোগ, দরজা-জানালা ভেঙে পার্টি অফিসে ঢুকে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল। ফালাকাটা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি অনিল অধিকারী বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ করছে বিজেপি।” দিনহাটাতেও বিজেপির একটি পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। এক কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। বিজেপির তরফে কোচবিহারের পুলিশ সুপারের দফতরে একটি স্মারকলিপি দিয়ে এই নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অবরোধে মন্ত্রীই
বুধবার গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়া এলাকায় রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোলাম রব্বানির নেতৃত্বে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। মন্ত্রী বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের কথা ভেবে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। সেই প্রতিবাদ থামাতেই দলের সাংসদকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ তাঁর কথায়, অভিযোগ থাকলে আগে গ্রেফতার করা হল না কেন? কেন নোট বন্ধের প্রতিবাদ করায় এই সিদ্ধান্ত? তবে দুর্ভোগে ফেলার জন্য মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন মন্ত্রী। ইসলামপুর শহরেও বিক্ষোভ হয়। বিকেলে রায়গঞ্জের রেল স্টেশন এলাকা থেকে বিদ্রোহী মোড় হয়ে শিলিগুড়ি মোড় পর্যন্ত ধিক্কার মিছিল করেন তৃণমূলের কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক। তৃণমূল সূত্রের দাবি, এ দিন জেলার ৯টি ব্লকে বিক্ষোভ মিছিল, অবস্থান বিক্ষোভ ও প্রতীকী পথ অবরোধ করা হয়।
জলপাইগুড়িতে মিছিল
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে ব্রহ্মপুর সার্ক রোড, ফাটাপুকুর, বেলাকোবার বটতলায় পথ অবরোধ হয়। বিকেলে জলপাইগুড়ি শহরে থানা মোড়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল৷ সমাজপাড়ার আইএমএ মাঠ থেকে একটি মিছিলও বের হয়৷ বিজেপির পক্ষ থেকেও এ দিন জেলার কিছু কিছু জায়গায় স্থানীয় ভাবে মিছিল হয়৷ বিজেপির জেলা সভাপতি দীপেন্দ্র প্রামাণিক জানান, বৃহস্পতিবার জেলায় মিছিল করা হবে৷
হাসমি চকে উত্তেজনা
গৌতম দেব কলকাতায়। তাই শিলিগুড়িতে কৃষ্ণ পাল, রঞ্জন সরকারদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল করে তৃণমূল। সেবক রো়ড, হিলকার্ট রোড হয়ে মিছিল হাসমি চকে এলে উত্তেজনা ছড়ায়। এখানেই বিজেপি দফতর। তবে এলাকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী ছিল। যেমন পুলিশ ছিল হিলকার্ট রোডে সিপিএম অফিসের সামনেও। হাসমি চকে প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল। এর ফলে দীর্ঘ ক্ষণ যানজটে ফেঁসে ছিল শহর। এর মধ্যে মহকুমা শাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়ালেন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের বিভিন্ন পার্টি অফিসে হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন দলের প্রতিনিধিরা। সে সময় মহকুমা শাসক ঘরে না থাকলেও সেখানে তাঁরা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তার আগেই তাঁদের মিছিল পুলিশ আটকে দেয়। এই সময় পুলিশের সঙ্গে বিজেপি প্রতিনিধিদের ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে পরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে আসে বিজেপি।