ঘটনা এক: বছরখানেক আগের কথা। সিটি-স্ক্যান বিভাগে রোগীদের লাইন পড়ে গিয়েছে। অথচ কারও স্ক্যানই হচ্ছে না। কেন? মেশিনই তো চলছে না। রেডিওলজি বিভাগের কর্মীরা খোঁজ করতে গিয়ে দেখলেন, যন্ত্রাংশের তার কেটে নিয়েছে ইঁদুর। বাধ্য হয়ে রোগীদের পাঠানো হল শিলিগুড়ি হাসপাতালে।
ঘটনা দুই: কিছু দিন আগে মাইক্রো-বায়োলজি বিভাগে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে আবার বিপত্তি। রক্তের ‘কালচার’-এ ‘রিএজেন্ট’ দিতে গিয়ে চিকিৎসক দেখেন, তার মোড়ক কেটে নষ্ট করেছে ইঁদুর। ওই ‘রিএজেন্ট’ আর ব্যবহার করা গেল না।
ঘটনা তিন: ময়নাতদন্তের জন্য দেহ রাখা ছিল জরুরি বিভাগে। তার মধ্যেই কখন চোখ আর ঠোটের কাছে খুবলে খেয়ে যায় ইঁদুর। কাজের সময়ে সেটা দেখতে পান ফরেন্সিক বিভাগের চিকিৎসক-কর্মীরা। পরে মৃতের পরিবারের লোকেরা জানতে চাইলে ময়নাতদন্ত সময়ে ক্ষত হয়েছে বলে কোনওমতে বিষয়টি সামলান তাঁরা।
এমন ইঁদুর দৌরাত্ম্যেই এখন নাজেহাল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ। যার হাত থেকে বাদ যায় না কেউই। হাসপাতালেরই এক কর্মী বলছিলেন, এই তো কয়েক দিন আগে অধ্যক্ষের দফতরে বাতানুকূল যন্ত্র অকেজো হয়ে যায়। দেখা যায় ইঁদুরে তার কেটে নিয়েছে। এখানেই থেমে না থেকে সেই বাহিনী ঢুকে পড়েছে হাসপাতালের বায়ো-সেফটি লেভেল ৩-এর ল্যাবরেটরিতে। সেই যন্ত্রের তার কেটে দেওয়ায় তা বিগড়ে ল্যাবরেটরির কাজই ডুবতে বসেছিল।
ইঁদুরের সঙ্গে যোগ হয়েছে বাদুড় বিপদও। বিশেষ করে অ্যানাটমি বিভাগে বাদুড় এত বেড়ে গিয়েছে যে, আশঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বাদুড় থেকেই ‘নিফা’ ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শিলিগুড়িতে অজানা জ্বরের কারণ ‘নিফা’ ভাইরাস বলেই মনে করা হয়।
এই দুই প্রাণীকে সামলাতে কী ভাবছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? সুপার মৈত্রেয়ী কর বলেন, ‘‘কী ভাবে এদের হাত থেকে মুক্তি পাব, তাই নিয়ে আলোচনা চলছে।’’ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সরকার কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি নিয়ে নানা জায়গায় কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলেন, ‘‘গোটা ক্যাম্পাসেই ইঁদুর ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়েছে। ওটি স্টোরেও ইঁদুর ঢুকছে।’’
কিন্তু এদের তাড়ানো হবে কী ভাবে? কেউ বলছেন পেস্ট কন্ট্রোল। কেউ বলছেন, বিশেষ একটি ক্যাপসুলের ব্যবহার। ইঁদুর মারতে কেউই রাজি নন। তাই এ ভাবে তাড়ানোর চেষ্টা করা হতে পারে। কিন্তু তাড়ালে সে ইঁদুর যাবে কোথায়? এই প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেললেন হাসপাতালের সাধারণ এক কর্মী। বললেন, ‘‘সে পরে ভাবা যাবে। আগে তো হাসপাতালটা বাঁচুক।’’