জনসংযোগে নিশীথ প্রামাণিক। (ডান দিকে) ভেটাগুড়িতে মিছিলে উদয়ন গুহ। নিজস্ব চিত্র
যেখানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী ঠিক করার জন্য গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষের মত নিতে জনসংযোগ যাত্রায় ব্যস্ত, সেখানে কোচবিহারের দিনহাটা এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটে ‘বিরোধীরা কেউ প্রার্থী দিতে পারবে না’ বলে বিতর্কে জড়ালেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দিনহাটা ২ ব্লকের নাজিরহাটের শালমারায় তৃণমূলের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দেন। বলেন, ‘‘আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের তিনশোটির বেশি বুথে বিজেপি-সহ বিরোধীরা কেউ প্রার্থী দিতে পারবে না। পঞ্চায়েত ভোটে যদি বিজেপি বুথ দখল করতে আসে, তা হলে তাদের পিঠের চামড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ ডুগডুগি বাজাবে।’’ এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধীরা পাল্টা কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের শাসক দলকে।
উদয়ন বলেন, ‘‘যদি কেউ প্রার্থী দিতে পারে, তার সঙ্গে আমাদের লড়াই হবে। ক্ষমতা নেই বিজেপির। দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রে যে তিনশোর বেশি পঞ্চায়েত আসন রয়েছে, সেখানে বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস, কেউ প্রার্থী দিতে পারবে না। সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তৃণমূলের।’’
উদয়নের বক্তব্য প্রসঙ্গে শুক্রবার জেলা কংগ্রেস নেতা কমল দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে রাজ্যের শাসক দলের বিসর্জন শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’ সিপিএম নেতা শুভ্রালোক দাস বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই ওই দলের নেতারা এখন দিশেহারা হয়ে আবোল-তাবোল বকে চলছেন। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের শাসক দল প্রার্থী দিতে পারবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।’’ বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, ‘‘আপাতত দুর্নীতিতে ডুবে যাওয়া তৃণমূল নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছেন, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের বিসর্জন অনিবার্য। আবোল তাবোল বলে ভীতি-সন্ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এতে লাভ হবে না।’’
গত বুধবার কোচবিহারের দিনহাটার ভেটাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান তিন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। তার কয়েক দিন আগে, গোসানিমারিতেও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিন গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এবং এক পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। এর পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক এই দলবদলের ঘটনাকে ‘মিশন ভেটাগুড়ি’ বলে উল্লেখ করেন। এ দিন সে ভেটাগুড়িতেই মিছিলে উদয়ন অবশ্য চ্যালেঞ্জ ছোড়েন, ‘‘আজ দেখিয়ে দিলাম, মিশন ভেটাগুড়ি। আপনার ক্ষমতা হবে না দিনহাটার কোথাও গিয়ে এ রকম মিছিল করার।’’
উদয়ন আরও বলেন, ‘‘মিশন ভেটাগুড়ি, মিশন দিনহাটা আর হবে না, মিশন পুটিমারিও আর হবে না। ভেটাগুড়ির মধ্যে কুয়োর ব্যাঙকে আবদ্ধ থাকতে হবে। ওই কুয়ো থেকে আমরা আর বার হতে দেব না।’’ এ দিকে, বিজেপির তরফে ভেটাগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় এ দিনই জনসংযোগে নামেন নিশীথ। কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। ভেটাগুড়ির কালীরপাট এলাকায় স্থানীয় কালীমন্দিরে পুজো দেন। সেখানে এলাকার বাসিন্দারা সংবর্ধনা জানান মন্ত্রীকে। তাঁকে কাছে পেয়ে অনেকেই নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। নিশীথ দাবি করেন, ‘‘এত দিন এলাকায় সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করে রাখা হয়েছিল। সেই ভয়ের পরিবেশ কাটিয়ে সাধারণ মানুষ বেরিয়ে এসেছে। এখন যদি এলাকায় কেউ সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, উপযুক্ত জবাব দেবে মানুষ।’’ উদয়নের পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না পারার মন্তব্য প্রসঙ্গে অবশ্য কিছু বলতে চাননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ।