হাওয়া ঠিকঠাক বুঝতে জিপিএস বেলুন ওড়াচ্ছে সিকিমের আবহাওয়া দফতর। প্রতিদিন সূর্য ওঠার ঠিক আগে গ্যাংটকের পাহাড় থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বেলুন। দিনভর সেটি আকাশ থেকে হাওয়ার নানা তথ্য পাঠাচ্ছে জিপিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে স্থানীয় আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বুঝঝেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি বুঝতে এর আগেও বেলুন ওড়াত সিকিমের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। তবে সেই বেলুনের ক্ষমতা ছিল খুবই কম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ কিলোমিটারের বেশি উঁচুতে যাওয়া সম্ভব ছিল না সেই বেলুনের। হাওয়ার দিক এবং গতি ছাড়া আর কিছুই জানাতে পারত না সেই বেলুন। তা দিয়ে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বোঝা ছিল অসম্ভব। সে কারণেই সিকিমে ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা তা জানতে দিল্লি অথবা কলকাতার অপেক্ষায় থাকতে হতো। দূর থেকে বিশ্লেষণ করে নিখুঁত তথ্যও মিলত না, তারফলে সে দিনের সাদামাটা পূর্বাভাস ছাড়া অন্য কিছু দিতে পারত না দফতর। এমনকী সিকিমের আকাশে যখন ঝোড়ো হাওয়া ঢুকে পড়েছে তখনও মালুম পেত না কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর।
এবার থেকে জিপিএস-বেলুনে আবহাওয়া বদলে যাওয়া থেকে প্রতিদিনের পূর্বাভাস নিখুঁত জানা যাবে বলে আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে। এর ফলে সিকিমের পর্যটক এবং ট্যুর অপারেটরদেরও পরিকল্পনায় সুবিধে হবে বলে জানানো হয়েছে। কোনোও পাহাড়ি এলাকায় পর্যটনে আবহাওয়ার পূর্বাভাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন সিকিমে সে ব্যবস্থা না থাকায়, পর্যটকদের সর্তক বা আশ্বস্ত্য কোনটাই প্রশাসনের তরফে করা সম্ভব ছিল না। যার জেরে হঠাৎ তুষারপাত অথবা শিলাবৃষ্টি-ঝড়ে সিকিমে পর্যটকদের আটকে থাকাও প্রতি মরশুমের ঘটনা। এ বার থেকে জিপিএস বেলুনের সৌজন্যে পর্যটকদের সেই দুর্ভোগ থেকেও মুক্তি দেওয়া যাবে বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর।
গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের গ্যাংটকের অফিসে জিপিএস-বেলুনের পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। গত ৪ মে পরীক্ষামূলকভাবে একটি বেলুন ওড়ানো হয়, তারপর থেকে নিয়মিত আবহাওয়া দফতরের বেলুন উড়ছে সিকিমের আকাশে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘আবহাওয়া বুঝতে বেলুনের ওপরে নির্ভর করতেই হয়। এতদিন আমাদের কাছে যে বেলুন ছিল তার তেকে খুব একটা কিছু জানা যেত না। এখন জিপিএস ব্যবস্থায় যে বেলুন ওড়ানো হচ্ছে, তাতে প্রায় নিখুঁত পুর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।’’
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে বেলুন তথ্য পাঠাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অন্তত ৩০ কিলোমিটার উঁচুতে উড়তে পারে। উঁচু আকাশের হাওয়ার গতি, দিক, আদ্রতা, চাপ এবং তাপমাত্রা জানাতে পারে বেলুনটি। কেন্দ্রীয় দফতরের অধিকর্তা গোপীনাথবাবু জানিয়েছেন, লাগোয়া কোনও এলাকায় নিম্নচাপ তৈরি হলে, অথবা ঝড় তৈরি হলে উঁচু আকাশে অনেক আগেই হাওয়ার গতিপ্রকৃতি বদলে যায়। নতুন বেলুনের মাধ্যমে এই বদলে যাওয়ার খবরই এখনই থেকে প্রতিদিনই খোঁজ পাচ্ছেন সিকিমের আবহাওয়া দফতর। তার জেরে ছাঙ্গুর আবহাওয়া কোন দিন কেমন থাকবে, উত্তর সিকিমের কোথায় প্রবল তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, দুপুরের পরে পূর্ব বা পশ্চিম সিকিমের আকাশে ঝড় আসবে কিনা তা সে দিন সকালেই পুর্বাভাস দিতে পারবে আবহাওয়া দফতর। এই তথ্য উচ্ছসিত ট্যুর অপারেটররাও। ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘শুধু শীত বা বর্ষাই নয়, সব মরশুমেই সিকিমের আবহাওয়ার গতি বোঝা ভার। হঠাৎ কখন ঝড় বা প্রবল তুষারে পর্যটকরা আটকে পড়েন তা নিয়ে উদ্বগ্ন থাকতে হয়। এখন থেকে আবহাওয়া দফতর প্রতিদিন সকালেই পূর্বাভাস দেখে, কোনও এলাকায় দুযোর্গের আশঙ্কা থাকলে সেখানে পর্যটকদের পাঠাব না , অথবা সর্তক করে দিতে পারব।’’
আবহাওয়া দফচতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এক একটি বেলুনের দাম প্রায় ৮ হাজার টাকা। প্রতিদিনই নতুন বেলুন ছাড়া হচ্ছে এবং হবে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। বেলুনে জিপিএস যন্ত্র ছাড়াও একটি সিলিন্ডার থাকে। সিলিন্ডার ভরা হাইড্রোজেন গ্যাস। সেই গ্যাসের ধাক্কাতেই বেলুন ওড়ে। গ্যাস শেষ হলে বেলুনগুলি আছরে পড়ে কোনও লোকালয়ে অথবা জঙ্গল কিংবা গভীর পাহাড়ি খাদে।