ভরা নদীর স্রোতে কাঠ পাচার

কারও সর্বনাশ, তো কারও পৌষমাস। বর্ষায় ফুঁসে ওঠা নদীর স্রোত গ্রাস করছে বাস্তুভিটে। আবার সেই স্রোতকেই লাগিয়ে ‘চালি’ ভাসিয়ে জলপথে কাঠ পাচারের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

কোচবিহারে তোর্সায় জল কমছে। সেই আশাতেই নদীতে চোখ এক বাসিন্দার। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

কারও সর্বনাশ, তো কারও পৌষমাস। বর্ষায় ফুঁসে ওঠা নদীর স্রোত গ্রাস করছে বাস্তুভিটে। আবার সেই স্রোতকেই লাগিয়ে ‘চালি’ ভাসিয়ে জলপথে কাঠ পাচারের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকায়।

Advertisement

প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তোর্সা, কালজানি, রায়ডাক, সঙ্কোশ-সহ বিভিন্ন নদীপথে ওই বেআইনি পাচারের রমরমা চলছে। মাঝে কিছুদিন বন্যা পরিস্থিতির জেরে পাচারে ভাঁটা পড়েছিল। তবে জল কিছুটা নামতেই ফের পাচারকারীদের রমরমা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, জুলাই মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আচমকা অভিযান চালিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকার বেআইনি কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে। নদী লাগোয়া বড়লাউকুঠি থেকে পুন্ডিবাড়ির মত বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই কাঠ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে পুন্ডিবাড়িতে উদ্ধার করা কাঠে জলে ভেজার নমুনার পাশাপাশি নদীর বালি লেগে ছিল। তাতে তোর্সা নদীর স্রোতকে কাজে লাগিয়েই কাঠ পাচারের জন্য আনা হয় বলে সন্দেহ বেড়েছে। বাড়তি নজরদারির দাবিও উঠেছে। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “সাঙ্কেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে নদীর স্রোতে কাঠ ভাসিয়ে কিছু পাচারকারী সুযোগ নিতে চাইছে। সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ইতিমধ্যে নদী ও লাগোয়া এলাকা থেকেও প্রচুর কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে।” কোচবিহারের এডিএফও দেবরাজ শূর জানিয়েছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে পুন্ডিবাড়ি এলাকায় ছোট গাড়ি-সহ প্রচুর কাঠ আটক করা হয়। তোর্সা নদী দিয়ে ওই কাঠ ভাসিয়ে আনা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে।’’

কী ভাবে হয় এই পাচার?

Advertisement

নির্দিষ্ট এলাকার নদীর ঘাটে জঙ্গলের কাঠ মজুত করে তাতে সাঙ্কেতিক ভাবে যার কাছে ওই কাঠ পৌঁছবে তার নামের ইংরেজি আদ্যাক্ষর লেখা হচ্ছে। কোন এলাকায় একাধিক ব্যাক্তির নাম একই হলে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে পদবির আদ্যাক্ষর। তারপর গাড়ির চাকার টিউবের ওপর ভেলা তৈরি করে বাঁশ বসিয়ে কাঠ সাজিয়ে রেখে বেঁধে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা পাচারকারী মহলে ‘চালি’ পদ্ধতি নামে পরিচিত। দুই ঘাটে থাকা পান্ডারা নিজেদের মধ্যে মোবাইলে যোগাযোগ করছেন।

কাঠ পৌঁছলে দিনমজুরদের দিয়ে পাড়ে এনে ঘোড়ার গাড়ি, ছোটগাড়িতে বেআইনি কারবারিদের ডেরায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, কোচবিহারের পুন্ডিবাড়ি, বড়লাউকুঠি, ফলিমারি, নাজিরান দেউতিখাতা, পুন্ডিবাড়ি, বালাভূত, মারুগঞ্জ, চিলাখানা-সহ ডুয়ার্সের কিছু ঘাট থেকেও ‘চালি’ করে কাঠ কারবার হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই জানাচ্ছেন, অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বিনা বাধায় বেআইনি কাঠ গন্তব্যে পৌঁছনোর সুবিধে থাকাতেই পাচারকারীরা নদীপথ বেছে নিচ্ছেন। পরিবেশপ্রেমী সংগঠন অরূপ গুহ বলেন, “স্রোত বেশি বলে নদীপথে কাঠ পাচারের প্রবণতা এখন অনেকটাই বেড়েছে। বন কর্মীদের নজরদারির পরিকাঠামো দরকার।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement