জমা জলে ভরসা ভেলা। আলিপুরদুয়ারের চাপরের পাড় ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বীপচর এলাকায়। ছবি: নারায়ণ দে
কোথাও জলবন্দি হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। কোথাও বিপদসীমার কাছ দিয়ে বইছে নদীর জল। কোচবিহারের তুফানগঞ্জের রায়ডাক (১) নদীতে ‘হলুদ সতর্কতা’ও জারি করা হয়েছে। কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার সর্বত্র একই পরিস্থিতি।
কোচবিহারে তোর্সা নদীর জলে বলরামপুরের শোলাডাঙা গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কয়েকশো বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। গ্রামের রাস্তা জলে ডুবে গিয়েছে। বৃষ্টির জলে কোচবিহার শহরের কয়েকটি রাস্তা জলের তলায় চলে গিয়েছে। তুফানগঞ্জ ১ ব্লকের নাটাবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জাইগির চিলাখানা, সাহাপাড়া এলাকায় গদাধর নদীর ভাঙনে প্রায় দু’শো বাড়িতে জল ঢুকে যায়। বৃষ্টিতে তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকায় কয়েকটি জায়গায় জল ঢুকেছে। তুফানগঞ্জের সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, রায়ডাক (১) নদীতে ‘হলুদ সঙ্কেত’ জারি করা হয়েছে। নাটাবাড়ি বিধানসভার অন্তর্গত নাটাবাড়ি ১ অঞ্চলের জায়গির চিলাখানায় বন্যাকবলিত এলাকার পরিস্থিতি দেখেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘দুর্গত মানুষদের সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।’’ দিনহাটার বিভিন্ন এলাকাতেও জল জমেছে। একটানা বৃষ্টিতে দিনহাটার গীতালদহ, মাতালহাট-সহ বেশ কিছু এলাকায় নদী ফুঁসতে শুরু করেছে।
আলিপুরদুয়ার পুরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড-সহ একাধিক এলাকায় বৃষ্টির জল জমেছে। পুরপ্রধান প্রসেনজিৎ কর বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। প্রয়োজন অনুযায়ী, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কুমারগ্রাম ব্লকের তুরতুরিখণ্ড, রায়ডাক, কামাখ্যাগুড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি, আলিপুরদুয়ার দুই ব্লকের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কুমারগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলি লামা বলেন, ‘‘জলমগ্ন এলাকাগুলি পরিদর্শন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের পাশে প্রশাসন রয়েছে।’’
ক্রান্তিতে তিস্তা, চেল, খুলনাই, ধরলা, ফালঝোরা-সহ বিভিন্ন নদীর জল বাড়ছে। প্রবল বৃষ্টিতে ব্লকের চাপাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাস্টারপাড়া, কেরানিপাড়া ও সেনপাড়ার প্রায় ২৫০টি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বিঘার পরে বিঘা জমি জলের তলায় চলে যাওয়ায়, আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না কৃষকেরা। এলাকা জুড়ে পানীয় জলের মারাত্মক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী বুলু চিক বরাইক বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সেচ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।’’ তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কায় চ্যাঙমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। কালচিনি ব্লকের হাসিমারা চৌপথি থেকে সাতালি যাওয়ার রাস্তা, কালচিনি স্টেশন লাইন, শান্তি কলোনি-সহ একাধিক এলাকা জলমগ্ন। অনেক বাড়িতেও জল ঢুকেছে। এ ছাড়া, জলমগ্ন হ্যামিল্টনগঞ্জের পাঁচমোড় এলাকা। জয়গাঁরও বিস্তর এলাকা এ দিন জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বাসরা নদীর জল সেন্ট্রাল ডুয়ার্স চা বাগানে ঢুকেছে। ধূপগুড়ি পুরসভার ৩, ৭, ১২, ১৫, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড-সহ একাধিক এলাকায় রাস্তা, বাড়ি জলমগ্ন। ময়নাগুড়ি শহরের ৭, ৮, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থাও খারাপ।