ফাইল চিত্র
মালদহ থেকে দুই দিনাজপুর—লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আলুর দাম। তার জেরে বাঙালির পাত থেকে কার্যত উধাও হতে বসেছে আলু। উর্ধ্বমুখী লঙ্কা এবং অন্যান্য আনাজের দরও। কিন্তু অভিযোগ, তিন জেলাতেই দোকান-বাজারে দেখা নেই প্রশাসনিক টাস্ক ফোর্সের। সেই সুযোগেই কি আলু, আনাজে কালোবাজারি চলছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।
মালদহ
সাতসকালেই মাথার উপরে গনগনে রোদ। তার মধ্যেই ইংরেজবাজারের রথবাড়ি বাজারে ব্যাগ হাতে হাজির পঞ্চাশোর্ধ অশোক সাহা। আলুর দাম কত? ৩৫ টাকা শুনেই ভ্রু কুঁচকে পাশের আনাজের দোকানে চলে যান তিনি। সেখানে লঙ্কা ২০০, পটল ৮০ টাকা কেজি দাম শুনেই তিনি বলেন, “লঙ্কা দিয়ে আলু সেদ্ধ ভাতও দেখছি আর জুটবে না। আলু, আনাজের দামে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ না থাকলে মধ্যবিত্তদের জল-ভাত খেয়ে কাটাতে হবে।’’
জানা গিয়েছে, পাইকারি বাজারে ২৫ থেকে ২৮ টাকা করে দরে আলু বিকোচ্ছে। খুচরো বাজারে সেই আলুই বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে। মাসখানেক ধরে এমনই চলছে বলে অভিযোগ। লঙ্কা, পটল, ঝিড়ের মতো আনাজের দামও আকাশছোঁয়া। আর দাম নিয়ে বাজারগুলিতে চলছে কালোবাজারির অভিযোগ। মালদহের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র বলেন, ‘‘বাজারে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। প্রয়োজনে অভিযান আরও বাড়ানো হবে।’’
দক্ষিণ দিনাজপুর
বাজার এক, দাম ভিন্ন। এমনই ছবি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট বাজারে। অভিযোগ, বাজারের কোনও দোকানে ৩২ টাকা, কোনও দোকানে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। লঙ্কার ঝালেও হাত পুড়ছে মধ্যবিত্তদের। কাঁচালঙ্কা বাজারে বিকোচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি করে। আলু, আনাজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। অভিযোগ, বাজারগুলিতে প্রশাসনের নজরদারি নেই। যার জন্য খেয়ালখুশি দরে দক্ষিণ দিনাজপুরের বাজারগুলিতে বিকোচ্ছে আনাজ। যদিও নজরদারি নিয়মিত চালানো হয় বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। ব্যবসায়ীদের দাবি, দক্ষিণ দিনাজপুরে ভিন্ জেলা থেকে আলু নিয়ে আসতে হয়। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে আনাজের দামেও।
উত্তর দিনাজপুর
পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি আলু ২৬ টাকা এবং লঙ্কা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই আলু, লঙ্কাই খুচরো বাজারে বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩২ এবং ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এমনই ছবি উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়েই। গত তিন সপ্তাহ ধরেই আলু, লঙ্কা, আনাজের দাম উর্ধ্বমুখী। রায়গঞ্জের মোহনবাটী বাজারের খুচরো আনাজ ব্যবসায়ী কমলেশ সাহা বলেন, “লকডাউন পরিস্থিতি থাকাকালীন সময় থেকে জেলার বাজারগুলিতে চাহিদার তুলনায় আলু ও লঙ্কার সরবরাহ কম হচ্ছে। এরপরেই রয়েছে টানা বৃষ্টি। যার প্রভাব পড়েছে আলু, আনাজের দামের উপরে।” অভিযোগ, অভিযান নেই টাস্ক ফোর্সের। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার সুমিত কুমার বলেন, “খুব শীঘ্রই জেলার বাজারগুলিতে আলু ও লঙ্কার দাম নিয়ন্ত্রণে আতে অভিযান শুরু করা হবে। তবে এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি নির্দেশ মেলেনি।”
তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ সাহা, অনুপরতন মোহান্ত, গৌর আচার্য