Siliguri

মানুষের পাশে সব সময় ‘ঊর্মিলাদি’

২০১৫ সালে কাজের সূত্রের বিভিন্ন এলাকা চেনা স্বামীকে পরিচিতদের মাধ্যমে পর্যটকদের গাইড হিসাবে পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত করিয়েছেন।  তাঁর স্বামী সাঙ্গে এখন আর কাঠের কাজ করেন না।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ০৯:০৪
Share:

‘ঊর্মিলাদিদি’—ঊর্মিলা সুব্বা। নিজস্ব চিত্র

পরিবারের আর্থিক সমস্যায় দশম শ্রেণির বেশি পড়াশুনো করতে পারেননি। বিয়েও হয়ে গিয়েছিল তাড়াতাড়ি। সে পরিস্থিতিতে পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে রাস্তায় নেমে কাজ করেছেন। পাহাড়ি এলাকায় কাঠের মিস্ত্রি স্বামী সাঙ্গে শেরপার রোজগার নিয়মিত ছিল না। সংসার সামলাতে মাথায় গামছা বেঁধে ১০০ দিনের শ্রমিক হিসাবে দিনের পর দিন নালা-নর্দমা বা রাস্তা তৈরি, জঙ্গল সাফের কাজ করেছেন। বিকালে বাড়ি ফিরে রান্না, পরিবার সামাল দিয়েছেন। কিন্তু একমাত্র মেয়ে নিমাকে কখনও স্কুলছুট হতে দেননি। নিমা এখন কলেজ পড়ুয়া হতে চলেছে। দু’দশক আগে থেকে এই লড়াই চললেও, এখন পৌঁছে গিয়েছে বাড়ির উঠোনের বাইরেও। দার্জিলিং পাহাড়ের সোনাদার ‘ঊর্মিলাদিদি’, ঊর্মিলা সুব্বা এখন স্থানীয় অনেক মহিলা, অনেক পরিবারেরই ভরসা।

Advertisement

কার কখন রক্তের প্রয়োজন, কার ব্লক অফিসে দরখাস্ত জমা করতে হবে, কারও পরিবারের সমস্যা মেটাতে হবে, আবার কার ছেলে বা মেয়েকে স্কুলে ঠিক সময়ে ভর্তি করতে হবে, সব যেন ঊর্মিলার দায়িত্ব। করোনা সংক্রমণের সময় আপার নয়াবস্তি, সোনাদা, ধোতরে চা বাগানে ঘুরে ঘুরে চাল, ডাল-সহ খাবার জোগাড় করে টানা রেশন বিলি করেছেন। কোথাও জীবাণুশাসক দেওয়া দরকার টেলিফোন করে সে ব্যবস্থা করা, মাস্কের প্রচার বা রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর কাজে খামতি রাখেননি ঊর্মিলা। নিজের শরীরে খেয়াল না করে রাতদিন কাজও করেছেন। তাই সকাল হতেই এখন তাঁর বাড়িতে ভিড়ও করেন পাহাড়ি গ্রামের মহিলারা, আসছেন পুরুষেরাও।

পাহাড়ি গ্রামে অনেক দুঃস্থ পরিবারের বসবাস। কেউ অসুস্থ হয়ে রক্তের প্রয়োজন হলেই সমতলে যেতে হয়। রক্তের জোগাড় করতে হলে, বাড়ে সমস্যা। তাই এলাকার মহিলা, পুরুষদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রক্তদান শিবির করেন ঊর্মিলা। বলেন, ‘‘শিবিরে সংগ্রহ করা রক্ত হাসপাতাল, মেডিক্যাল যাচ্ছে। আমরা ডোনার কার্ড রাখছি। কারও রক্তের প্রয়োজন হবে জানলেই, কার্ড দিচ্ছি।’’ এ ছাড়া, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প, ঋণের হদিস দিয়ে মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার রাস্তা দেখান ঊর্মিলা। শেরপা উন্নয়ন বোর্ডও তাঁকে সঙ্গে নিয়েছে নানা কাজের জন্য। সুমন শেরপা, ফুংডোমা তামাং, চেতনা শর্মার মতো সোনাদা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, ‘‘ঊর্মিলাদিদিকে দেখে সবাই অনুপ্রাণিত হই। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের কাজ করারতাগিদ ওঁর সব সময়।’’

Advertisement

ধাপে ধাপে নিজেও স্বচ্ছলতার আলো কিছু দেখেছেন ঊর্মিলা। ২০১৫ সালে কাজের সূত্রের বিভিন্ন এলাকা চেনা স্বামীকে পরিচিতদের মাধ্যমে পর্যটকদের গাইড হিসাবে পাঠিয়ে প্রশিক্ষিত করিয়েছেন। তাঁর স্বামী সাঙ্গে এখন আর কাঠের কাজ করেন না। ঊর্মিলাও ১০০ দিনের কাজ যান না। সাত বছর আগে, সোনাদা বাজারের নীচে নিজেদের বাড়িতে শেরপা হোম-স্টে খোলেন ঊর্মিলা। একটা ঘর থেকে দু’টো, এখন বেড়ে ছয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ঊর্মিলার কথায়, ‘‘সৎ ভাবে মানুষের পাশে থেকে পরিশ্রম করে গেলে নতুন দিশা, আলোর অভাব হয় না। সব মেয়ের মধ্যে দেবী দুর্গার প্রভাব ফুটে উঠুক, সে আশা নিয়ে কাজ করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement