মাটিগাড়ায় একটি ডিস্কোতে গোলমালের জেরে এ ভাবেই মারধর করা হয় এক তরুণীকে। ফাইল চিত্র
পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত ছাড়াই শিলিগুড়িতে ‘ডিস্কো’, ‘সিঙ্গিং বার’, ‘নাইট ক্লাব’-এর সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও পুলিশ-প্রশাসন কেন হাত গুটিয়ে বসে আছে তা নিয়ে শহরের নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
শহরবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, নাচগানের আসরে কিছু দুষ্কৃতী পিস্তল, ছুরি, ভোজালি নিয়েও ঢুকে পড়ছে। লাগোয়া বিহার ও নেপাল থেকেও কিছু দুষ্কৃতী স্থানীয় সমাজবিরোধীদের মদতে রাতে শিলিগুড়ির বাগডোগরা, মাটিগাড়া, সেবক রোড, এনজেপি, হিলকার্ট রোড, প্রধাননগর এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি মাটিগাড়ার একটি ডিস্কোয় গোলমালের পরে দুই তরুণীকে মারধরের পরেও কেন গভীর রাতের পানশালা, ডিস্কোয় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কড়া পদক্ষেপ হচ্ছে না বলে জনমানসে নানা সন্দেহ দানা বাঁধছে।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অফিসারদের কয়েকজন অবশ্য জানান, কড়া নজরদারির জন্যই বর্ষশেষ থেকে বর্ষবরণ পর্যন্ত শহরের কোথাও গোলমাল হয়নি। তবে এক পুলিশকর্তা জানান, নাইট ক্লাব, ডিস্কোয় ও পানশালার মালিকদের নিয়ে ফের বৈঠক করে তাঁদের তরফে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ করতে বলা হবে।
বস্তুত, কলকাতার প্রথম সারির পানশালা, সিঙ্গিং বার, ডিস্কোর আসর, নাইট ক্লাবে কর্তৃপক্ষককেই নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেছেন কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। যেমন, কোনও ক্লাব, ডিস্কো, পানশালায় আসা প্রতিটি গাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, আপত্তিকর সামগ্রী আছে কি না তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম(আন্ডার ভেহিকেল সারভিল্যান্স সিসটেম)হয়। প্রতিটি নাইট ক্লাব, ডিস্কো, পানশালায় ঢোকার মুখে ‘মেটাল ডিটেক্টর’ রাখাটা বাধ্যতামূলক। সেখানে ঢোকার পরে ভিতরে মূল কক্ষে ঢোকার সময়ে হাত ব্যাগ ও শরীর পরীক্ষা করার জন্য দ্বিতীয় দফায় ‘হ্যান্ড হেল্ড মেটাল ডিটেক্টর’ রাখতে হবে। ভিড়ে ঠাসা ডিস্কো, পানশালায় সকলের গতিবিধি নজরে রেখে কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা রক্ষীদের নিজেদের মধ্যে বার্তা চালাচালি করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
কলকাতার একাধিক ডিস্কোর মালিক জানাচ্ছেন, বর্ষবরণের অনেক আগেই কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে বৈঠক ডেকে সকলকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছিল। মধ্য কলকাতার একটি ডিস্কোর অংশীদার জানান, যে হেতু পানভোজনের পরে নাচানাচি করলে অনেকেই অতিরিক্ত উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন, সে জন্যই সামান্য বচসা থেকে গোলমালের আশঙ্কা থাকে। সে জন্য নিরাপত্তা রক্ষীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে কী ভাবে যুযুধান গ্রাহকদের উত্তেজনা ঠেকিয়ে জখম না করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া যাবে তার প্রশিক্ষণও দেন কলকাতার একাধিক ডিস্কো কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু, শিলিগুড়িতে মাটিগাড়ার ডিস্কো কিংবা সেবক রোডের পানশালার বেশির ভাগেই পর্যাপ্ত মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবহার নেই। গভীর রাতে আসর শেষের পরে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের গাড়ি চালানোর অবস্থা থাকবে কি না তা আগাম নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেই। এমনকী, রাত-বিরেতে নাইট ক্লাবের গাড়ির পার্কিং ব্যবস্থা ও সেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখতে কী করণীয় তা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কোনও আলোচনাই হয়নি বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
তবে পুলিশের দাবি, শীঘ্রই তা করা হবে। শিলিগুড়ির এক পুলিশ কর্তা জানান, শীঘ্রই ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ও নিরাপত্তা নিয়ে পানশালা, ডিস্কো ও নাইট ক্লাবের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। শিলিগুড়ির পানশালা মালিকদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই নিরাপত্তা সুরক্ষিত করতে যাবতীয় পদক্ষেপ করবেন।