হিমঘরের আলুর বন্ডের কুপন বিলিকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল
হিমঘরে আলুর বন্ড রাখা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছেই। শুক্রবার দুপুরে বন্ড নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ তুলে কোচবিহারের দেওয়ানহাটে হিমঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান এক দল কৃষক। জলপাইগুড়ি দেলায় ছ’টি হিমঘরে বন্ডের কুপন বিলি নিয়েও গোলমাল চলে। এ দিকে, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা বলা হলেও, তাতে নেই শিলিগুড়ির নাম না থাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বামপন্থী কৃষক সংগঠন কৃষক সভা।
শুক্রবার দুপুরে আলুর বন্ড নিয়ে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে দেওয়ানহাট। পুলিশ কৃষকদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশকে লক্ষ করে ঢিল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের বিরুদ্ধেও লাঠি চালানো ও ‘স্টান গ্রেনেড’ ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। দু’জন পুলিশ কর্মী-সহ ১০ জন জখম হন। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানিরাজ বলেন,, ‘‘পাথর ছোড়ার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।’’ মহকুমাশাসক (কোচবিহার সদর) রাকিবুর রহমান বলেন, ‘‘বন্ড নেওয়ার লাইনে দু’বার করে দাঁড়ানো নিয়ে সমস্যা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানো হয়েছে।’’
কমল বর্মণ নামে এক কৃষক বলেন, ‘‘চার বিঘা আলু চাষ করেছি। এক বিঘায় একশো প্যাকেট (পঞ্চাশ কেজির প্যাকেট) আলু হয়েছে। শুধু তিরিশ প্যাকেটের আলু রাখার বন্ড পেলে, বাকি আলু কী করব।’’ কৃষকদের অভিযোগ, একটি হিমঘরে কয়েক লক্ষ প্যাকেট আলু রাখা যায়। চোরাপথে ওই বন্ড কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। হিমঘর কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, নিয়ম মেনেই বন্ড দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু বন্ড প্রশাসনের হাতে রয়েছে। প্রশাসন থেকেও কৃষকদের বন্ড দেওয়া হবে।
হিমঘরের পক্ষে ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, যাঁরা প্রথম দিকে বন্ড নিয়েছেন, তাঁরাই ফের দ্বিতীয় বার লাইনে দাঁড়ালে গোলমাল হয়। ধৃতি বলেন, ‘‘সব আইন মেনেই হচ্ছে। সবাইকে তিরিশ প্যাকেটের বন্ড দেওয়া হবে।’’ কৃষক সভার কোচবিহার জেলার যুগ্ম সম্পাদক আকিক হাসানের অভিযোগ, ‘‘একে আলুর দাম নেই, অন্য দিকে, এক শ্রেণির তৃণমূলের দালালদের হাতে আলুর বন্ড তুলে দিয়েছেন হিমঘর কর্তৃপক্ষ।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের কোচবিহার জেলা সভাপতি খোকন মিয়াঁ বলেন, ‘‘প্রকৃত কৃষকেরাই আলুর বন্ড পাচ্ছেন।’’
জলপাইগুড়িতেও শোভার হাট সংলগ্ন সাহেববাড়ি গঙ্গা হিমঘরের বন্ডের কুপন বিলি কেন্দ্র করে গোলমাল হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ লাঠি চালায় ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। উত্তেজিত কৃষকেরা হিমঘরের মূল গেট ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, হিমঘরের লোহার গেটের সামনে ও ভিতরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অফিস ঘরে চলে ভাঙচুর। পুলিশ ও কৃষকের বিবাদে চলে ইট-পাথর ছোড়া হয়। কয়েকজন পুলিশকর্মী জখম হন। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো বলেন, ‘‘বন্ডের কুপন না পেয়ে ঝামেলা হয়। ছয় রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’’ গঙ্গা হিমঘরের মালিক রবি বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছ’লক্ষ বন্ডের কুপন দেওয়া হয়েছে। কোনও কালোবাজারি হয়নি।’’
জেলার আরও পাঁচটি হিমঘরেও এ দিন বন্ড নিয়ে গোলমাল হয়। অভিযোগ, বন্ডের কুপন দুপুরের মধ্যে প্রায় সব হিমঘরে শেষ হয়ে যায়। এর পরেই উত্তেজনা ও ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বন্ড নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগও ওঠে। ৭৩ মোড় সংলগ্ন দু’টি হিমঘরে হুড়োহুড়ির জেরে, জখম হন এক মহিলা-সহ আট জন কৃষক। বিভিন্ন হিমঘরের সামনে হুড়োহুড়িতে পড়ে জখম প্রায় পনেরো জন কৃষককে ভর্তি করা হয় জলপাইগুড়ি হাসপাতালে।
জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বন্ডের কুপন বিলিকে কেন্দ্র করে ভিড় হয়েছিল হিমঘরের সামনে। কয়েক জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে।’’
এ দিকে, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা বলা হলেও তাতে শিলিগুড়ির নাম না থাকায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে কৃষক সভা। সংগঠনের দার্জিলিং জেলার তরফে আজ, শনিবার মহকুমার ভালুকগাড়া মোড়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে জানানো হয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি ঝরেন রায় জানান, তাঁরা এক হাজার টাকা কুইন্টাল প্রতি আলুর সহায়ক মূল্যের দাবি জানাচ্ছেন। শিলিগুড়ির চাষিরা তা থেকে বঞ্চিত হলে সমস্যায় পড়বেন। শিলিগুড়িতে গ্রাম পঞ্চায়েত ভোট নেই, তাই শিলিগুড়ি বঞ্চিত কি না, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কিসান খেত মজদুর তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি ছোটন কিসকুর দাবি, তিনি রাজ্য স্তরে বিষয়টি জানাবেন। তবে তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার কৃষকদের কথা ভেবেই আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।