প্রক্রিয়া: উত্তরবঙ্গের একটি বটলিফ প্ল্যান্ট। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
অনেক ভরসা নিয়েই বাজেট বক্তৃতা শুনেছেন। কিন্তু কোথাও ‘চা’ শব্দটি পাননি বলে দাবি এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। তাহলে কি চা শিল্প এবার বঞ্চিতই থেকে গেল? জবাবে সকলেরই একই কথা, তাঁরা হতাশ।
শনিবার দুপুরে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট পড়া শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় ‘চা-চর্চা’। বিকেলে ছোট বাগানগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন সিস্টা-র সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী মন্তব্য করেন, “ইন্টারনেটে বাজেট বক্তৃতা জোগাড় করে, বারবার পড়া হল। আমরা তো চা শব্দটাই ঠিকঠাক খুঁজে পেলাম না!” একই সুর ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব সুমন্ত গুহঠাকুরতার গলাতেও। তাঁর মন্তব্য, “বলার কিছুই নেই। কারণ উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের জন্য বাজেটে তেমন কোনও উল্লেখই পাইনি।” সব মিলিয়ে চা বাগান মালিক থেকে শ্রমিক বেশিরভাগ সংগঠন কর্তারাই তাঁদের হতাশার কথা গোপন করেননি।
বাগান মালিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, কর্মী-শ্রমিকদের বেতনের জন্য নগদ টাকা তুলতে গেলে ব্যাঙ্ক গোড়াতেই কর কেটে নিচ্ছে। এর ফলে মজুরি দিতে চা বাগান সংস্থাগুলির দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। বাজেটে এই সমস্যার সুরাহার দাবিও ছিল মালিক পক্ষের। যদিও তার কোনও উল্লেখই এ দিনের বাজেটে নেই বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগে বন্ধ চা বাগান খুলতে সক্রিয় হয় চা পর্ষদ। চা শিল্প সংস্থাগুলিকে আশ্বাস দেওয়া হয়, উত্তরবঙ্গের বন্ধ এবং রুগ্ণ চা বাগান খুলতে কেন্দ্রীয় সরকার পদক্ষেপ করবে। তাই বন্ধ এবং রুগ্ণ বাগানগুলির জন্য প্যাকেজ অথবা ন্যূনতম কোনও ছাড় ঘোষণার আশায় বুক বেঁধেছিল চা শিল্প। সেই আশায় জল ঢেলেছে এ দিনের বাজেট, এই অভিযোগ শিল্পের অন্দরেই। বাগান মালিকদের আরেকটি সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (টাই) মহাসচিব প্রবীর ভট্টাচার্যের আক্ষেপ, “অন্তত নগদ লেনদেনের উপরে গোড়ায় কর কেটে নেওয়ার বোঝাটা যদি লাঘব করত। প্রবল ভাবে সেই দাবি জানানো হয়েছিল।” টাই-য়ের তরফে বাজেট নিয়ে একটি আশা-নিরাশার ‘নোট’ দেওয়া হয়েছে। তাতে কর ছাড় না দেওয়ার সঙ্গে রাসায়নিক ওষুধে রাতারাতি বিধিনিষেধ চা শিল্পে ধাক্কা লাগবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের বিজেপি নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, চা নিয়ে বহু পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। সেগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসবে। উত্তরবঙ্গের চা উৎপাদনের বেশিরভাগটাই আসে ছোট চা বাগান থেকে। ছোট বাগান নিয়েও কোনও কথা ছিল না বাজেটে। অসমের মতো অনুদান দাবি করেছিল উত্তরবঙ্গের মালিকেরা। সেই আশাও পূরণ হয়নি।
জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা চা বাগানের পরিচালক কৃষ্ণকুমার কল্যাণী বলেন, “চা বাগান শ্রমিক, কর্মী থেকে মালিক সকলেরই সমান প্রাপ্তি হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে। তা হল বঞ্চনা।”