ফায়ারিং রেঞ্জে সেনার ফেলে যাওয়া জিনিস কুড়োতে গিয়ে বিস্ফোরণে মৃত্যু হল দুই কিশোরের৷ জখম হয়েছে আরও তিন জন৷ চিকিৎসাধীন৷ মৃত ও জখমরা প্রত্যেকেই ডুয়ার্সের সোনালি চা বাগানের জংলি লাইনের বাসিন্দা৷
বাগারাকোটের সোনালি চা বাগান সংলগ্ন এলাকায় ওই তিস্তা ফায়ারিং রেঞ্জে নিয়মিত মহড়া দেন সেনা জওয়ানেরা৷ শনিবারও সেখানে মহড়া হয়৷ রবিবার সকাল ছটা-সাড়ে ছটা নাগাদ একদল কিশোর সেখানে যায়৷ সেনার ফেলে যাওয়া জিনিস কুড়োতে গিয়ে শেল জাতীয় কিছু ফেটে বিপত্তি ঘটে৷ আহত সকলেরই বয়স দশ থেকে চোদ্দো বছরের মধ্যে৷
সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই সোলেমান ওঁরাও (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়৷ পরে সেখানে মারা যায় সুরজিৎ ওঁরাও (১৩)৷ রমেন ওঁরাও ও রাজীব ওঁরাও নামে দুই কিশোর চিকিৎসাধীন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বাবুলাল ওঁরাও জানিয়েছেন, নিকেল ওঁরাও নামের আরও এক কিশোর জখম হয়েছে৷ তবে তার চোট সামান্য৷
তিস্তা ফায়ারিং রেঞ্জে ফায়ারিংয়ের সময় স্থানীয়দের যাওয়া নিষেধ৷ কিন্তু তার আশপাশের জমিতে অনেকে চাষাবাদ করতে যান৷ অনেকে গরুও চরাতে যান৷ এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে৷ তবে এ দিনের ঘটনায় দুই কিশোরের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকস্তব্ধ৷ ভোরবেলা মাঠে গরু ছাড়তে প্রায়ই যেত সলমন ওঁরাও, সুরজিৎ ওঁরাওরা। বিশেষ করে রবিবার ছুটির দিন। স্কুল বন্ধ থাকায় ভোরে এক সঙ্গে বার হত সোলেমান, সুরজিৎরা। ভোরে গরুগুলো ছেড়ে বন্ধুরা মিলে খেলত।
এ দিনও সেই মতো বেরিয়েছিল তারা। গরু ছাড়ার পর মাঠে গিয়ে গোলা জাতীয় কিছু দেখতে পেয়ে সেটিকে ভাঙতে গিয়েই সর্বনাশ হল। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মর্গের সামনে বসে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন মৃত সোলেমানের বাবা সন্তু ওঁরাও। বলছিলেন, ‘‘সব শেষ হয়ে গেল। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়েছিলাম। হইচই শুনে উঠি। কয়েকজন জখম হয়েছে জেনে অন্যদের সঙ্গে দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি ছেলে মাঠে পড়ে কাতরাচ্ছে।’’ সলমনের দেহ ময়নাতদন্ত হতেই বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ খবর আসে সুরজিৎ আর নেই। জরুরি বিভাগে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা বন্ধু ওঁরাও, দাদা তিলা ওঁরাওরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান মালবাজারের বিধায়ক বুলু চিক বরাইক৷ নিহত ও আহতদের বাড়িতেও যান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন ঘটনা এড়াতে ও মানুষকে সচেতন করতে এলাকায় প্রচার চালানো হবে৷ নিহতদের সরকারি কোনও সাহায্য দেওয়া যায় কি না তাও দেখা হচ্ছে।’’ মালবাজারের এসডিপিও দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে৷ সেনা কর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে৷’’ আলাদা করে ঘটনার তদন্ত করছে মালবাজার মহকুমা প্রশাসনও৷ মালবাজারের মহকুমা শাসক দাভাল জৈন এ দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আহতদের দেখতেও যান৷