জাতীয় উদ্যানের সাফারি বা পারমিটের লাইন নিয়ে গোলমাল। ভর দুপুরে রিসর্টে ঢুকে খাবার, পানীয় চেয়ে হম্বিতম্বি করা। কিংবা, উৎসবের মরসুমে লজ-রিসর্টে ঢুকে দাবি মতো চাঁদা দাবি।
ডুয়ার্সে বারবার পর্যটকরা এমন অভিযোগ তুলেছেন। শুটিং করতে গিয়ে পরিচালক অরিন্দম শীলও এমন অভিযোগ করেছেন। তা নিয়ে সরগরমও হয়েছিল ডুয়ার্স। প্রাথমিক ভাবে এই সমস্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং পর্যটকদের সাহায্যের জন্য উত্তরবঙ্গে প্রথমবার ডুয়ার্সে ‘টুরিস্ট পুলিশ ভলেন্টিয়র’ তৈরি করল জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ।
গরুমারা, চাপড়ামারির জঙ্গলকে কেন্দ্র করে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে আপাতত পাঁচটি দল কাজ শুরু করেছে। লাটাগুড়ি, মেটেলি এবং মালবাজারকে কেন্দ্র করে ওই ভলান্টিয়াররা কাজ করছেন। তাঁদের সাইকেল দেওয়া হয়েছে। ডুয়ার্সে হলেও পাহাড় বা তরাইয়ে তা কেন হবে না, সেই প্রশ্নও আবার উঠেছে। দার্জিলিং জেলার পর্যটনস্থলগুলির সঙ্গে এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা বিমানবন্দরে দ্রুত এই ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার বলে পর্যটন ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘জলপাইগুড়ি পুলিশ খুব ভাল কাজ করেছে। দার্জিলিং জেলার বিষয়টি দেখছি।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এই ভলান্টিয়ারদের বাছাই করা হয়েছে সযত্নে। কথাবার্তায় মার্জিত, নম্র ব্যবহার এমন জনা ৫০ পুরুষ-মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাছাই করে ওই কাজে লাগানো হয়েছে।
প্রতিদিন নিয়ম করে রিসর্ট লজে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের টিকিট কাউন্টারগুলিতে টুরিস্ট পুলিশ ভলেন্টিয়ার থাকছে। কয়েক জন পুলিশকর্তা জানান, ভলান্টিয়াররা টিকিট-পারমিটের সময়, রাস্তা-সহ পর্যটকদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করছেন। আবার গোলমাল, বচসা বা জঙ্গলের রাস্তায় পানভোজন দেখলেই এগিয়ে গিয়ে ওঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তেমন মনে হলে ফোনে থানায় খবর দিচ্ছেন। জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘দলগুলি আরও বাড়ানো হবে। শুধু আইন শৃঙ্খলা দেখা নয়, এ ভাবে পুলিশ সামাজিক কাজও করবে।’’
এখন দিনভর লাটাগুড়ি বাজার, নেওড়া মোড় বা মেটেলি বাজারে গেলেই টুরিস্ট পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকদের দেখা মিলছে। সিভিক ভলান্টিয়ারদের পোশাকের উপর আলাদা করে কাপড় দিয়ে ওই নামও লিখে দেওয়া হয়েছে। পর্যটকেরা এগিয়ে গিয়ে নানা তথ্য বা বিষয় জেনে নিচ্ছেন ওই ভলান্টিয়ারদের কাছে।
লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব জানান, ‘‘পর্যটকদের সঙ্গে আমাদেরও নিরাপত্তা অনেকটা সুনিশ্চিত হয়েছে।’’ শুধু ডুয়ার্স নয়, উত্তরবঙ্গের সমস্ত পর্যটন এলাকাগুলিতে এমন ব্যবস্থা দরকার বলে ইস্টার্ন হিমালয়া ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সম্রাট সান্যাল। তিনি জানান, আগামী এপ্রিল থেকে জুন অবধি পর্যটন মরসুম চলবে। সেই সময় এই ব্যবস্থা বেশি দরকার। কেননা, পাহাড়ে এই ধরনের সাহায্য পর্যটকদের অনেক বেশি প্রয়োজন হয়।