বামকর্মীদের বাড়িতে বোমা, অভিযুক্ত তৃণমূ

4 CPM leaders and supporters allegedly throwing a bomb at home.ভোট পরবর্তী হিংসা দক্ষিণ দিনাজপুরেও ছড়িয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এ জেলার কুশমণ্ডি থানার উদয় অঞ্চলের চণ্ডীপুর এলাকায় সিপিএমের ৪ নেতা-সমর্থকের বাড়িতে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০২:২৭
Share:

বাড়ির দেওয়ালে বোমার দাগ। ছবি: অমিত মোহান্ত।

ভোট পরবর্তী হিংসা দক্ষিণ দিনাজপুরেও ছড়িয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এ জেলার কুশমণ্ডি থানার উদয় অঞ্চলের চণ্ডীপুর এলাকায় সিপিএমের ৪ নেতা-সমর্থকের বাড়িতে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তির শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। বাড়ির দেওয়ালে বোমা লেগে ফেটে যায় বলে কেউ জখম হয়নি। তবে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

Advertisement

গরমের রাতে বাড়ির ছাদে শুয়ে ছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডির চণ্ডীপুর এলাকার সিপিএমের কর্মী রেবতী মণ্ডল। আচমকা একটি বোমা উড়ে এসে কার্নিশে এসে লেগে ফেটে যায়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য গৌতম গোস্বামী সহ আরও দু’জন বাম কর্মীর বাড়িতেও বোমা পড়েছে। তবে কেউ আহত হননি। অভিযোগের তিন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে।

বুধবার সিপিএমের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতা রীতেশ জোয়ারদারের কয়েকজন অনুগামীর বিরুদ্ধে। সিপিএমের দাবি, তারপরেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। এলাকার সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য গৌতম গোস্বামী অভিযোগ করেন, গত ৫ মে দলের স্থানীয় নেতা তথা পঞ্চায়েতের কর্মাধ্যক্ষ নির্মল সরকার আক্রান্ত হন। তৃণমূলের হামলায় তাঁর মাথা ফেটে যায়। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তাঁকে চিকিৎসা করাতে হয়। অথচ পুলিশ অভিযুক্তদের হয়ে পাল্টা মামলা দায়ের করে। তাতে নির্মলবাবুকে অন্যতম অভিযুক্ত করা হয়েছে।

Advertisement

ঠিক একই ভাবে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসকে আড়াল করতে মঙ্গলবারের বোমাবাজির ঘটনাকে পুরনো দিঘি দখলের বিবাদের মামলা বলে সাজিয়ে পুলিশ আক্রান্তদের বিরুদ্ধে পাল্টা ‘কাউন্টার কেস’ করে তাদের অভিযুক্ত করার চেষ্টা করছে বলে কুশমণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্রের জোটের বাম প্রার্থী তথা বিদায়ী আরএসপির বিধায়ক নর্মদা রায় অভিযোগ করেন। এ দিন বিকেলে নর্মদা রায়, গৌতম গোস্বামী সহ এক প্রতিনিধি দল কুশমণ্ডির বিডিও অমিয়চন্দ্র সরকারের সঙ্গে দেখা করে পুলিশের পক্ষপাতিত্বের বিরুদ্ধে নালিশ জানান। জেলা পুলিশ সুপার রসিদ মুনির খান বলেন, কুশমণ্ডির মহিপাল দিঘির দখল নিয়ে পুরনো বিবাদের জেরে গন্ডগোল বলে থানা থেকে জানানো হয়েছিল। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

এলাকার তৃণমূল নেতা রীতেশ জোয়ারদার অবশ্য বামেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তাঁর অভিযোগ, দিঘিতে মাছ ধরা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দু’পক্ষ গ্রামবাসীর মধ্যে বিবাদ চলছে। তার জেরে গন্ডগোল হতে পারে। বোমাবাজির ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত নন। এলাকার সিপিএমের ব্রাঞ্চ কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ ঘোষের বাড়ি লক্ষ্য করে রাতে দুষ্কৃতীরা বোমা ছোড়ে। এরপর গৌরাঙ্গবাবুর প্রতিবেশী জোট সমর্থক রেবতী মন্ডল, সঞ্জয় সাহা ও কণক চাকির বাড়ি লক্ষ্য করেও পরপর তিনটি বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। গৌরাঙ্গবাবু বলেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটে রেবতী, সঞ্জয়বাবুরা শাসক দলের হয়ে ভোটে খেটেছিল। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে ওরা আমাদের জোট প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেন। ফলে তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ার শাস্তি পেতে হবে বলে হামলাকারীরা আগেই হুমকি দিচ্ছিল। আমরা আমল দিইনি। কিন্তু রাতের অন্ধকারে আচমকা বাড়ি লক্ষ্য করে পরপর বোমাবাজির ঘটনায় শাসক দলের ওই কর্মীরা কী করতে পারে, বুঝিয়ে দিল।’’ রেবতীবাবু বলেন, ‘‘সে সময় বাড়ির ছাদে শুয়েছিলাম। একটুর জন্য বোমাটি ছাদে না পড়ে কার্নিশে লেগে ফেটে যায়।’’

এ দিন এলাকায় গিয়ে পুলিশ বাড়ির দেওয়ালে বারুদের দাগ দেখতে পায়। ফেটে যাওয়া বোমার পোড়া সুতলি উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই এলাকায় পঞ্চায়েতের অধীন মহিপাল দিঘির দখল নিয়ে দুপক্ষের রেষারেষিতে ওই গন্ডগোল হয়েছে বলে স্থানীয় থানা কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়। নর্মদা রায়ের অভিযোগ, হামলাকারীদের না ধরে ভোট পরবর্তী ওই বোমাবাজির ঘটনাকে লঘু করতে দিঘি দখলের পুরনো মামলায় প্রতিপক্ষ তৃণমূল সমর্থক বাবলু রহমানদের বিরুদ্ধে ওই হামলায় অভিযুক্ত করে পাল্টা হামলার অভিযোগে গৌরাঙ্গবাবু, রেবতীবাবুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। কুশমণ্ডির ব্লক প্রশাসন বিষয়টি প্রতি নজর না দিলে তাঁরা বালুরঘাটে গিয়ে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে আন্দোলনে নামবেন বলে নর্মদাবাবু জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement