অভিযুক্ত সঞ্জয় ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘর দেওয়ার নাম করে বাড়িতে ডেকে এক মহিলাকে ধর্ষণ করার চেষ্টার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের উপপ্রধানের স্বামীর বিরুদ্ধে। গ্রামবাসীরা অভিযুক্তকে ধরে শাস্তি দেওয়ার জন্য সালিশি সভা বসায়। পরে পুলিশ গিয়ে অভিযুক্ত উপপ্রধানের স্বামীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে তিনি ও তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এই ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নঘরিয়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের এক আমবাগানে গ্রামবাসীরা সালিশি সভা বসান বলে অভিযোগ। সেখানে পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের স্বামীকে মারধরও করা হয়। তারপরে এদিন দুপুরে থানায় গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই নির্যাতিতা মহিলা। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম সঞ্জয় ঘোষ। তিনি ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অলকা ঘোষের স্বামী। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অলকাদেবীর বাড়ি নঘরিয়া গ্রামে। বাড়ির পাশেই একটি আম বাগান রয়েছে। সেই আম বাগানের অন্য পারে বাস করেন এক মহিলা। তাঁর স্বামী ভিন রাজ্যে কাজ করেন। এবং তাঁর বড়ো ছেলেও বাবার সঙ্গে কাজ করে। বাড়িতে একটি ১৪ বছরের ছেলে ও ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন ওই মহিলা। বুধবার রাতে সঞ্জয়বাবু তাঁকে ফোন করে বাড়িতে ডাকেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, তাঁকে বলা হয় ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘর দেওয়া হবে। তার জন্য তাঁর সাক্ষরের দরকার রয়েছে। রাতেই ওই মহিলা তাঁর বাড়িতে যান। তার পরে তাঁকে ধর্ষণের করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। মহিলার চিৎকারে গ্রামের মানুষেরা ছুটে গেলে অভিযুক্ত পালানোর চেষ্টা করেন।
সেই সময় গ্রামবাসীরা ধরে ফেলেন তাঁকে। জানা গিয়েছে, এদিন রাতে সঞ্জয়বাবু বাড়িতে একাই ছিলেন। তাঁর স্ত্রী তথা তৃণমূলের উপপ্রধান অলকাদেবী তাঁর দুই বছরের ছেলেকে নিয়ে সোমবার তাঁর বাবার বাড়ি কালিয়াচকের জালালপুরে গিয়েছিলেন। ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে আসত সঞ্জয়। এদিন রাতে আমাকে ফোন করে জানায়, বিপিএলের ঘর দেওয়া হবে। তার জন্য একটা সই দরকার। আমি বলেছিলাম সকালে সই করতে যাব। তখন সে জানিয়েছিল, সকালে গেলে হবে না। তাই আমি রাতে গিয়েছিলাম। সেই সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না।’’ তাঁর অভিযোগ, তখন ধর্ষণের চেষ্টা হলে চিৎকার করলে লোকজন জড়ো হন। কোনও মতে তিনি পালিয়ে যান বলে তাঁর দাবি।
গ্রামবাসীরা বলেন, ‘‘আমরা তাঁকে নিজেরাই শাস্তি দিতাম। তিনি আমাদের উপপ্রধানের স্বামী। পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে পারে। তাই আমরা শাস্তির দেওয়ার জন্য সালিশি সভা ডেকেছিলাম। তবে পুলিশ গিয়ে তাঁকে নিয়ে চলে যায়। আমরা সবাই তাঁর শাস্তি চাই।’’ অভিযুক্ত সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘আমার কোন দোষ নেই। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’ স্বামীর পাশেই দাঁড়ান তৃণমূলের উপপ্রধান অলকাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী এমন স্বভাবের নয়। তাঁকে ফাঁসানোর হয়েছে।’’ এই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। এমনটা ঘটে থাকলে পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’’