স্বীকারোক্তির সুরে অভিষেক জানান, গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর দলের বেশ কিছু ভুল হয়েছে। ছবি: ফেসবুক।
আবার পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও জানিয়ে দিলেন, কোনও নেতার ঘনিষ্ঠতার সূত্রে ভোটের টিকিট মিলবে না, প্রার্থীর যোগ্যতা দেখা হবে তিনি কী ভাবে কাজ করছেন, তার মূল্যায়ণে। অভিষেকের কথায়, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ঠিক করবে দল। কোনও নেতার ছত্রছায়ায় থেকে, বোতল বয়ে, ব্যাগ বয়ে কিংবা চাটুকারিতা করে দলের প্রার্থী হবেন না কেউ। আমি দায়িত্ব নিয়ে এ কথা বলে যাচ্ছি।’’
গত বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে সবুজ ঝড় দেখা গেলেও উত্তরবঙ্গে মোটেই ভাল ফল হয়নি তৃণমূলের। কোচবিহারে পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল শাসকদলকে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ বার ‘হারানো জমি’ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য মমতা এবং অভিষেকের। অভিষেক যে মাথাভাঙায় সভা করলেন, সেই জায়গাটিও গেরুয়া প্রভাবিত এলাকা। মাথাভাঙা মহকুমায় দু’টি বিধানসভা— মাথাভাঙা এবং শীতলখুচি-সহ কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা এখনও বিজেপির দখলে। এই তিন এলাকায় রাজবংশী ভোটার যথেষ্ট। যাঁদের অনেকের মধ্যে ‘রাজ্য’ নিয়ে আবেগ রয়েছে। আবার শীতলখুচি, সিতাই ও মেখলিগঞ্জ বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষ আবার রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে। শাসকদলের দাবি, উত্তরবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও রাজ্য ভাগের ‘তত্ত্বে’ বিশ্বাস করছেন না। তাই উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের আবেগের কথা মাথায় রেখে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে, রাজ্য ভাগের প্রশ্নে বিজেপিকে কোণঠাসা করতে চাইছে তৃণমূল। অভিষেককেও বলতে শোনা যায় যে, তিনি উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, রাঢ়বঙ্গের ভেদ বোঝেন না। তিনি বোঝেন শুধু পশ্চিমবঙ্গ।
শনিবার মাথাভাঙায় দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘২০২১ সালের নির্বাচনে ৭টি বিধানসভায় আপনারা বিজেপিকে জিতিয়েছিলেন, আপনারা লোকসভাতেও জিতিয়েছেন বিজেপিকে। কিন্তু এখানকার সাংসদদের উত্তরবঙ্গ নিয়ে লোকসভায় বলতে শুনিনি।’’ একই সঙ্গে স্বীকারোক্তির সুরে অভিষেক জানান, গত পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর দলের বেশ কিছু ভুল হয়েছে। সভায় জনসমাগম দেখে অভিষেকের মন্তব্য, “তবে এখানে যে লোক দেখলাম, এটা পালাবদলের সমাবেশ। এখান থেকেই পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছি।’’ পর ক্ষণেই দলীয় নেতাদের তাঁর বার্তা, ‘‘আগামিকাল থেকে মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করুন। মানুষ তৃণমূলকে চায়। কয়েকটা মানুষের কুকর্ম আর অকর্মের জন্য মানুষ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। যদি কারও জন্য দলের কারও মাথা নত হয়, আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না, তিনি যত বড় নেতাই হোন, আর যাঁরই ছত্রছায়ায় থাকুন।’’