নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি তৃণমূলের। — নিজস্ব চিত্র।
বিএসএফের গুলিতে স্থানীয় যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তাঁর ডেপুটি তথা কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সপ্তাহখানেকের মাথায় অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানের শাস্তির দাবিতে রবিবার নিশীথের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি করতে চলেছে তৃণমূল। কর্মসূচির প্রস্তুতি সম্পূর্ণ কোচবিহারের ভেটাগুড়ি বাজারে। জোড়াফুল শিবিরের এই কর্মসূচির সমালোচনা করেছে বিজেপি।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি কোচবিহার সফরে গিয়েছিলেন অভিষেক। মাথাভাঙার কলেজ ময়দানের জনসভায় প্রেমকুমার বর্মণ নামে স্থানীয় এক যুবকের কথা উত্থাপন করেন তিনি। অভিষেক জানিয়েছিলেন, দিনহাটা ১ ব্লকের গীতলদহের ভারবাঁধা গ্রামের বাসিন্দা বছর তেইশের প্রেমকুমারের মৃত্যু হয় বিএসএফের গুলিতে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সেই দিন দাবি করেছিলেন, সম্প্রতি বেঙ্গালুরু থেকে ৪ বছর পরে বাড়ি ফিরেছিলেন প্রেমকুমার। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর সকালবেলা মাঠে ঘুরতে গিয়েছিলেন ওই যুবক। অভিষেকের দাবি, প্রেমকুমারকে এক-দু’হাত দূর থেকে বিএসএফের জওয়ানরা গুলি করে মারে। কেন তিনি প্রেমকুমারের কথা তোলেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অভিষেক সেই সময় বলেন, ‘‘উদাহরণ তুলে ধরলাম এই কারণে যে, প্রেমকুমারের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমি হাতে নিয়ে এসেছি। সেই রিপোর্ট দেখে আমি হতবাক। রিপোর্ট বলছে, তার শরীর থেকে ১৮০টি বুলেটের টুকরো পাওয়া গিয়েছে! ভাবুন, কী নৃশংস ভাবে একটা বাচ্চা ছেলেকে মেরেছে!’’ তাঁরা এর শেষ দেখে ছাড়বেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অভিষেক। এই আবহে রবিবার নিশীথের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি তৃণমূলের।
সেই কর্মসূচির প্রস্তুতি চলছে ভেটাগুড়ি বাজারে। ভেটাগুড়ি বাজারে অস্থায়ী ভাবে তৈরি হয়েছে মঞ্চ। রাস্তার ধারে তৃণমূল কর্মীদের বসার জন্য তৈরি হয়েছে ছাউনিও। যদিও তৃণমূলের দাবি, যে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে। কোচবিহারের জোড়াফুল শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, জমায়েতে ২৫ হাজার মানুষকে হাজির করাতে চলেছে তৃণমূল। তাঁরা পালা করে অংশগ্রহণ করবেন ঘেরাও কর্মসূচিতে। শনিবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ ভেটাগুড়িতে যান কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ। তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, ‘‘আগামিকাল কোচবিহার জেলার নেতারা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বক্তৃতা করবেন জেলার নেতারা। শান্তিপূর্ণ ভাবে এই ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।’’
তৃণমূলের নিশীথের বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে ক্ষিপ্ত বিজেপি। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বোস বলে, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক পরিপক্ক্বতার অভাব রয়েছে। তিনি কলকাতা থেকে ঘোষণা করেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ি ঘেরাও করতে হবে। তৃণমূল কখনও ভাষা সন্ত্রাস করে। কখনও হার্মাদ এবং পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি কর্মীদের ওপর অত্যাচার চালায়। ইদানীংকালে তারা আর একটা জিনিস আমদানি করেছে, বাড়ি ঘেরাও। সস্তার রাজনীতি করতে গিয়ে ওরা নিজেরাই লেজে-গোবরে হয়ে গিয়েছে।’’