জোটে ফাটলের আশা শাসক দলের

জোটের বল গড়াতে শুরু করলেও মাঝে মাঝে তা থমকাচ্ছেও। বৃহস্পতিবারই দ্বিতীয় দফার প্রার্থীতালিকায় হবিবপুরের পর মালদহের আরও তিনটি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বামফ্রন্ট। তিন দিন আগে কংগ্রেসের তরফে প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

জোটের বল গড়াতে শুরু করলেও মাঝে মাঝে তা থমকাচ্ছেও।

Advertisement

বৃহস্পতিবারই দ্বিতীয় দফার প্রার্থীতালিকায় হবিবপুরের পর মালদহের আরও তিনটি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বামফ্রন্ট। তিন দিন আগে কংগ্রেসের তরফে প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই তালিকায় প্রার্থীর নাম না থাকলেও জোটবিধি মেনে যে আসনগুলিতে তারা লড়বে সেই ছটি কেন্দ্রের নাম দিয়ে তালিকা দিয়েছিল কংগ্রেস। এ দিন বামফ্রন্ট যে তিনটি আসনের প্রার্থী তালিকা বের করেছে তার মধ্যে অবশ্য কংগ্রেসের তালিকায় থাকা ওই ছটি আসনের কোনওটিই নেই। কিন্তু এ দিন বামফ্রন্ট যে তিনটি আসনের প্রার্থী তালিকা দিয়েছে তার মধ্যে দুটি আসন নিয়ে দুই শিবিরে প্রথম থেকেই টানাপড়েন শুরু হয়েছিল। ওই আসনদুটি হল হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতিপুর। এ ছাড়া বামফ্রন্টের এদিনের তালিকায় রয়েছে গাজলও। তিন আসনের মধ্যে গাজল কেন্দ্র সিপিএমকে ছেড়ে বিনিময়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতিপুর আসন দুটি দাবি করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু এ দিন গাজলের পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতিপুর আসনেও বামফ্রন্ট প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। গাজল নিয়ে এ দিন কোনও সিদ্ধান্ত না নিলেও বাকি দুটি আসনে যে তারা প্রার্থী দিচ্ছে এ দিন ফের তা জেলা কংগ্রেসের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মৌসম নুর এ দিন বলেন, ‘‘হাইকম্যান্ডকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি যে হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতিপুর আসনটি আমরা কোনও পরিস্থিতিতেই ছাড়তে পারব না। কেন, তার সপক্ষে আমাদের একাধিক বাস্তবসন্মত যুক্তিও রয়েছে। আর গাজল আসনটি ছাড়ার ক্ষেত্রে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন কি না বুঝতে পারছি না। শুক্রবার অধীরবাবু দিল্লি থেকে ফিরলেই তা জানতে পারব। তবে হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতিপুর আসনেও আমরা প্রার্থী দিচ্ছি। ওখানে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।’’

Advertisement

গত বিধানসভায় গাজলে কংগ্রেস, হরিশ্চন্দ্রপুরে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী ও মালতিপুরে আরএসপি প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। গাজল ও হরিশ্চন্দ্রপুরে বিধায়করা পরে তৃণমূলে যোগ দেন। জোট প্রক্রিয়া শুরু হতেই হরিশ্চন্দ্রপুর ও মালতিপুর আসনদুটি নিয়ে দুই শিবিরে টানাপড়েন শুরু হয়। গত লোকসভা ভোটের নিরিখেই ওই দুই আসন তাদের ছাড়ার দাবি জানায় কংগ্রেস। যদিও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক শ্রীমন্ত মিত্র এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘বন্ধুত্ব মেনে নিয়েই তো আমরা রাজ্যে ৯টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছি। তাহলে ওরা হরিশ্চন্দ্রপুরে আমাদের জেতা আসন ছাড়বে না কেন?’’ আরএসপির জেলা সম্পাদক গৌতম গুপ্তও বলেন, ‘‘লড়াই কখনও বন্ধুত্বপূর্ণ হয় না। এমন হলে আখেরে তৃণমূলেরই সুবিধে হবে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে জেতা হরিশ্চন্দ্রপুর আসন ছাড়তে প্রথম থেকেই নারাজ ছিল ফরওয়ার্ড ব্লক। আর কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, এলাকায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কোনও সংগঠনই নেই। তার উপরে, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে তারাই এগিয়ে। এই পরিস্থিতিতে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর আসনে যে জোটের জট কাটছে না তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমনকী, দেওয়াল দখলেও নেমে পড়েছেন বাম-কংগ্রেস দুই শিবিরের কর্মীরা। তবে জোট না হলে ওই আসনটি যে হারাতে হতে পারে, বাম-কংগ্রেসের একাধিক নেতা যখন সেই আশঙ্কা করছেন তখন তৃণমূল শিবির অবশ্য বেশ উচ্ছ্বসিত। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও জোট না হলে তাঁদের জয় যে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে তা একান্তে স্বীকারও করে নিয়েছেন তারা।

গত বিধানসভায় ফব-র টিকিটে ওই আসনে জিতেছিলেন তজমুল হোসেন। সম্প্রতি তিনি অবশ্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসেরও যুক্তি রয়েছে। কংগ্রেস শিবিরের বক্তব্য, গত লোকসভা নির্বাচনে হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভায় কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬১৪৫৮টি ভোট। সেক্ষেত্রে বাম প্রার্থীর প্রাপ্য ভোট ছিল ৫০৬৫১ ভোট। আর তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ১৮৭৩১টি ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনে মালতিপুর বিধানসভায় কংগ্রেসের প্রাপ্য ভোট ছিল ৭০৮১৫টি! বামেরা পেয়েছিল ৩৪৬৪৮ ভোট। যা অর্ধেকেরও কম। এ ছাড়াও কংগ্রেসের দাবি, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক দল ছেড়েছেন। তিনি থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারত। তাদের আরও দাবি, হরিশ্চন্দ্রপুরে ফরওয়ার্ড ব্লকের নিজস্ব সংগঠন নেই। সিপিএমের কাঁধে ভর করেই নির্বাচনে তারা জেতে বলেও দাবি কংগ্রেসের। বিধানসভা এলাকায় কোনও গ্রাম পঞ্চায়েতও তাদের দখলে নেই। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতও দখলে রয়েছে। ফলে ওই আসনের দাবি অযৌক্তিক নয় বলে দাবি কংগ্রেসের। যদিও কংগ্রেসের ওই যুক্তিকে গুরুত্ব দিতে চাননি ফরওয়ার্ড ব্লক নেতারা।

দুই ‘জোটসঙ্গী’র মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হলেও যে আখেরে তৃণমূলেরই সুবিধা হবে তাতে কোনও সংশয় নেই বলে মানছে সব শিবিরই। কেননা গত লোকসভা নির্বাচনের যা পরিসংখ্যান তাতে জোটের ভোট যোগ হলে তৃণমূল প্রার্থীকে যে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে তা শুধু কংগ্রেস-বাম নেতারাই নন, একান্তে মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতাও। ফলে জোট ভেস্তে যাওয়ার ইঙ্গিত দেখে খানিক স্বস্তিতে ঘাসফুল শিবির। যদিও তৃণমূল প্রার্থী তজমুল হোসেন বলে দিচ্ছেন, ‘‘জোট নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই! কেননা হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ আমার সঙ্গে রয়েছেন।’’ বৃহস্পতিবারই পাশের জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে এসে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বাম-কংগ্রেস দু’পক্ষকেই বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, আসন নিয়ে বোঝাপড়া না হলে তোমার-আমার লড়াইয়ে জিতে যাবে তৃণমূল। ফলে এমন না করে একপক্ষকে বসে যেতে হবে। সেই বার্তার পরে ছবিটা বদলায় কি না সেটাই এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement