মদনমোহন মন্দিরের বড় তারা কালীর মূর্তি তৈরি চলছে। — নিজস্ব চিত্র
গলায় সোনার হার। কোমরে মুন্ডমালা। কপালে টিপ। নাকে নথ। পুজোর রাতে রকমারি সোনার গয়নায় সাজান হয় প্রতিমা। কোচবিহারের বড়তারা পুজোয় এবারেও সেই রীতি বজায় থাকছে। কোচবিহার মদনমোহন মন্দির চত্বরে আয়োজিত ওই পুজো ঘিরে রীতিমতো উৎসাহ তৈরি হয়েছে। পুজোর আয়োজক কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে পুজোর প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়েছে।
২৯ অক্টোবর কালীপুজোর দিন রাত ৯টা ৪০ মিনিটে শুরু হবে বড়তারার পুজো। রাত একটা পর্যন্ত পুজো চলবে। সোনার গয়নায় মুড়ে দেওয়া বড়তারার ওই পুজো ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করছে জেলা পুলিশ।
কোচবিহারের জেলাশাসক তথা দেবোত্তর ট্রাষ্ট বোর্ডের সভাপতি পি উল্গানাথন বলেন, “ রীতি মেনে পুরোহিতদের বিধান অনুযায়ী এবারেও বড়তারা পুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকবে।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “ আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকছে।”
দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, বড়তারা দেবীর প্রতিমার রঙ কালো। পরনে থাকে বাঘ ছালের আদলে তৈরি পোশাক। ফি বছর কালীপুজোর সন্ধ্যা থেকেই পুজো দেখতে বাসিন্দাদের ভিড় উপচে পড়ে। গভীর রাত পর্যন্ত চলা পুজো দেখে, অঞ্জলি দিয়ে অনেকে বাড়ি ফেরেন। সোনার গয়নায় মুড়ে দেওয়া প্রতিমার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থানেওয়া হয়।
মদনমোহন মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরা যেমন থাকেন, তেমনি বড়তারা মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য আলাদা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও মন্দির চত্বরে পুজো উপলক্ষে ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশকর্মী থাকেন।
ইতিহাস গবেষকরা জানিয়েছেন, কোচবিহারের পুরনো রাজবাড়ি সংলগ্ন এলাকার মন্দিরে আগে কালী পুজো হত। ১৮৯০ সালে শহরের বৈরাগী দিঘির পাড়ে মদনমোহন মন্দির চালুর পর থেকে ওই চত্বরে পুজো হচ্ছে। বিশালাকার প্রতিমার জন্য বাসিন্দাদের কাছে ওই পুজো বড়তারার পুজো নামে পরিচিত। কোচবিহারের বাসিন্দা ইতিহাস গবেষক দেবব্রত চাকি জানিয়েছেন, এখনকার বাস ট্রার্মিনাস ও পলিটেকনিক এলাকায় ছিল কোচবিহারের পুরান রাজবাড়ি। ওই সংলগ্ন এলাকাতেই ছিল স্থায়ী মন্দির। সেখানে রাজ পরিবারের উদ্যোগে কালীপুজো হত। তবে তখন ওই পুজো বড়তারা পুজো বলে পরিচিত ছিল কিনা তা জানা যায়নি।
মদনমোহন মন্দির চালুর পর থেকে সেখানে বিশালাকার প্রতিমার পুজো বড়তারা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এই পুজোর সঙ্গে কোচবিহারের বাসিন্দাদের বাড়তি আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। দেবোত্তরের এক কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “ পুরান রীতি মেনেই প্রতিমা সোনার গয়নায় সাজান হয়।”