মেধা তালিকায় মিশনেরই তিন

শুধু তাই নয়, এ বারের মাধ্যমিকে স্কুলের ফলও ভাল। স্বভাবতই বুধবার ফল প্রকাশের পর স্কুলে খুশির হাওয়া। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০৩:০৫
Share:

মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন দুই কৃতী ছাত্র অম্লান ভট্টাচার্য ও সায়ন্তন চৌধুরী। তাদের সঙ্গে মালদহ রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের সম্পাদক স্বামী ত্যাগরূপানন্দ। ছবি: তথাগত সেনশর্মা

মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্কুলের এক সঙ্গে তিন জন ঠাঁই পাওয়ায় জয়জয়কার মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের। স্কুলের দুই ছাত্র অম্লান ভট্টাচার্য ও সায়ন্তন চৌধুরী নবম এবং আর এক ছাত্র মির মহম্মদ ওয়াসিফ দশম স্থান অধিকার করেছে। রাজ্যের মেধা তালিকায় এক সঙ্গে তিন-তিনজন ছাত্রের ঠাঁই পাওয়া স্কুলের ইতিহাসে এই প্রথম বলে মিশন সূত্রেই খবর। শুধু তাই নয়, এ বারের মাধ্যমিকে স্কুলের ফলও ভাল। স্বভাবতই বুধবার ফল প্রকাশের পর স্কুলে খুশির হাওয়া।

Advertisement

মাধ্যমিকে বরাবরই ভাল ফল করে আসছে মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের ছাত্ররা। গত বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও এই স্কুলের এক ছাত্র রাজ্যে চতুর্থ স্থান ও একজন দশম স্থান পেয়েছিল। স্কুল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এবার এই স্কুলের ১০৭ ছাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল, সকলেই পাশ করে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশের ওপরে নম্বর পেয়ে পাশ করেছে ৩৮ জন। ৬৮১ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় নবম স্থান পেয়েছে এই স্কুলেরই অম্লান ভট্টাচার্য ও সায়ন্তন চৌধুরী। তাঁরা যুগ্মভাবে জেলায় দ্বিতীয় স্থানও পেয়েছে।

অম্লানের বাড়ি ইংরেজবাজার শহরেরই গৌড় রোডে। বাবা পার্থ ভট্টাচার্য ঠিকাদার ও এলআইসির এজেন্ট। মা সোমাদেবী গৃহবধূ। একমাত্র সন্তান সে। অম্লান জানিয়েছে, তার লেখাপড়ার মূল অনুপ্রেরণা তার দাদু। দাদুর আশা ছিল সে যেন মাধ্যমিকে ভাল ফল করে। কিন্তু মাত্র বছর দেড়েক আগে তিনি মারা যান। জেদ চেপেছিল সে সময়ই। সেই জেদেই রোজ ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। দাদু নেই, কিন্তু তাঁর স্বপ্নকে সাকার করতে পেরে খুশি অম্লান। পাশাপাশি বাবা-মায়ের অবদানের কথাও সে বলেছে। সে বলে, ‘‘আমি পড়তাম ও বাবা-মা রাত জেগে বসে থাকত।’’ স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে গৃহশিক্ষকদেরও ধন্যবাদ জানায় সে। ডাক্তার হওয়া তার লক্ষ্য। একই ভাবে ডাক্তার হওয়ায় ইচ্ছে মেধা তালিকায় নবম স্থান পাওয়া সায়ন্তনেরও। তার বাড়ি পুরাতন মালদহের মঙ্গলবাড়ি স্কুলপাড়ায়। বাবা গোপাল চৌধুরী ব্যবসায়ী, মা শিখা চৌধুরী হবিবপুর হাসপাতালের নার্স। সেও একই সন্তান। সায়ন্তন বলে, স্কুলে সে বরাবর এক থেকে পাঁচের মধ্যে ফল করত। বাড়িতে রোজ ৭ ঘন্টা পড়ত। বাবা-মায়ের পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষক ও গৃহশিক্ষকদের আবদানেই এই ফল।

Advertisement

এ দিকে মেধা তালিকায় দশম স্থান পাওয়া মির মহম্মদ ওয়াসিফের বাবা মির রুহুল ইসলাম কৃষি দফতরের কর্মী ও মা সারিফা ফিরদৌসী গৃহবধূ। দাদা তৌসিফ জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়েছে। তারা মালদহে সরকারি আবাসনে থাকে। রুহুলবাবু বলেন, ‘‘মির এখন রাজস্থানের কোটাতে আইআইটির কোচিং নিচ্ছে।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী সুরত্মানন্দ বলেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিকে স্কুলের ফল ভালো হচ্ছে। এবারে যে তিন জন মেধা তালিকায় জায়গা করে নেবে তা ভাবতেই পারিনি। খুবই ভাল লাগছে এই ফল।’’ মালদহ রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ত্যাগরূপানন্দ মহারাজ বলেন, ‘‘এই ফল সন্তোষজনক। আমরা গর্বিত।’’

বাবা স্কুল শিক্ষক হওয়ায় বাড়িতে বরাবরই শিক্ষার পরিবেশ ছিলই। স্কুলেও সে বরাবর পঞ্চম শ্রেণি থেকে প্রথম স্থানেরই অধিকারী ছিল। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকার প্রথম দশে যে তার নাম থাকবে তা কল্পনাও করতে পারেনি কালিয়াচকের বামনগ্রাম এইচ এম এ এম হাই স্কুলের ছাত্রী তমন্না ফিরদৌস। ৬৮০ নম্বর পেয়ে সে একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যের সেরা দশের পাশাপাশি এ বারে জেলাতেও সে মেয়েদের মধ্যে সেরা। তমন্নার এই ফলাফলকে ঘিরে খুশির হাওয়া স্কুল তো বটেই এমনকি কালিয়াচক ও গোটা মালদহ জেলা জুড়েই। পদার্থবিদ্যা নিয়ে অনার্স পড়ে তমন্না আইএএস অফিসার হতে চায়।

তমন্নার বাড়ি কালিয়াচকের নওদা যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশিমনগর মণ্ডলপাড়ায়। বছর দুয়েক আগেও এই নওদা যদুপুরে বোমা-গুলির লড়াই ও খুন-জখম ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। সে সবেই বারবার শিরোনামে উঠে এসেছিল এই এলাকা। কিন্তু পুলিশি তত্পরতায় সেই নওদা যদুপুর এখন কার্যত শান্ত। সেই এলাকারই বাসিন্দা তমন্না মাধ্যমিকে ৬৮০ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় দশম স্থান অধিকার করে নিয়েছে যা বেনজিরই বলে মনে করছে জেলার শিক্ষামহল।

তমন্নার বাবা মহম্মদ মনসুর আলি নওদা যদুপুরেরই সুকান্ত মেমোরিয়াল বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের শিক্ষক। মা ওয়াহিদা খাতুন গৃহবধূ। তমন্নারা তিন বোন ও এক ভাই। বোনদের মধ্যে সে ছোট। বড় দিদি নাসিবা ফারহিন বাংলায় অনার্স নিয়ে কালিয়াচক কলেজে পড়ছে ও মেজো দিদি নায়েমা আসরিন খড়গপুরের একটি বেসরকারি আবাসিক মিশনে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। ভাই আকিউল আব্রারও একটি বেসরকারি আবাসিক মিশনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

স্কুলে দাঁড়িয়ে তমন্না বলে, এ দিন টেলিভিশনেই প্রথম জানতে পারে যে সে মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় দশম স্থান পেয়েছে। পরে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলে আসে। স্কুলে বরাবর প্রথম হলেও মেধা তালিকায় যে সে ঠাঁই পাবে, তা স্বপ্নেও ভাবেনি। পরে পদার্থবিদ্যা নিয়ে অনার্স পড়ে আইএএস হওয়ার ইচ্ছে তাঁর। বাবা মনসুর সাহেব বলেন, ‘‘তমন্না বরাবরই মেধাবী। এলাকা মাঝে মধ্যে অশান্ত থাকলেও তাতে তমন্নার লেখাপড়ায় কোনও প্রভাব পড়েনি। মেয়ের এমন সাফল্যে আমি সহ গোটা পরিবার যারপরনাই খুশি।’’ খুশির হাওয়া স্কুলেও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওয়াহেদুজ জামান বলেন, ‘‘তমন্না বরাবরই মেধাবী। মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে জানতাম। দশম স্থান পাওয়ায় আমরা গর্বিত। এই প্রথম কোনও মেয়ে কালিয়াচক থেকে মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় ঠাঁই পেল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement