মা হয়েই পরীক্ষায়, কন্যাশ্রী রূপশ্রী নিয়ে প্রশ্ন

মালদহ জেলার তিন এলাকার এই তিন ছাত্রীই প্রথম মা হলেন। তাঁদের বয়স ১৯ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:১৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

এক দিনের ছেলেকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় বসেই মঙ্গলবার উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষা দিয়েছিল রতুয়ার অষ্টমী মাঝি। এ দিকে, ১৪ ঘণ্টা আগে সন্তানের জন্ম দিয়ে হাসপাতালের শয্যায় ঠায় বসেই বৃহস্পতিবার ইংরেজি পরীক্ষা দেয় হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের মাজুমা খাতুন। আবার, মাত্র এক ঘণ্টা আগে সন্তানের জন্ম দিয়ে শনিবার রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়েছিলেন মোথাবাড়ির মোবিনা খাতুন।

Advertisement

মালদহ জেলার তিন এলাকার এই তিন ছাত্রীই প্রথম মা হলেন। তাঁদের বয়স ১৯ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও অদম্য মনের জোরে এই তিন পরীক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও জেলায় কম বয়সে বিয়ে ও সন্তানের জন্ম দেওয়া নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল বিভিন্ন মহলে। প্রশ্ন উঠল, বাল্য বিবাহ রুখতে রাজ্য সরকারের তরফে চালু করা কন্যাশ্রী বা রূপশ্রী প্রকল্পের প্রভাব কি সে ভাবে কার্যকর হচ্ছে না? জেলায় বাল্য বিবাহ কি চলছেই? যদিও জেলার প্রশাসনিক মহলের দাবি, কয়েক বছর আগে এর চেয়ে অনেক বেশি ছাত্রীকে দেখা যেত সন্তানের জন্ম দিয়ে হাসপাতালের শয্যায় পরীক্ষা দিতে। ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা এখন অনেকটাই কমেছে।

তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, মালদহ জেলায় ১৮ বছরের চেয়ে কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছেই। বিশেষ করে, কালিয়াচক ১ ও ২ ব্লক, হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২ ব্লক, হবিবপুর প্রভৃতি ব্লকগুলিতে এই প্রবণতা বেশি। এর জেরে গত কয়েক বছর আগেও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘনঘন শিশুমৃত্যু ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। সেই শিশু মৃত্যুর কারণ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের পর্যালোচনায় উঠে আসে যে বাল্য বিয়ে ও অপরিণত বয়সে মা হওয়ার ফলে অপুষ্ট সন্তানের জন্ম হচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে সেই শিশুর। ওই ঘটনার পরে অবশ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর তো বটেই, এমনকি জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং বাল্য বিয়ে রুখতে জেলা জুড়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতা নিয়ে জোর সচেতনতা প্রচার শুরু করে।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, এখন জেলায় শিশু মৃত্যুর হার আর আগের মতো নেই। অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক তিন ছাত্রীর পরীক্ষার মধ্যেই সন্তান জন্ম দেওয়া নিয়ে সেই প্রশ্নই ফের উঠে এল। প্রশ্ন উঠল, জেলায় স্কুল, কলেজগুলিতে কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্প চালু থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এ হেন ঘটনা ঘটছে।

রতুয়ার ছাত্রী অষ্টমী মাঝির মা রুবি মাঝি অবশ্য বলেন, ১৮ বছর হওয়ার পরেই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। একই কথা আরেক ছাত্রী মাজুমার দিদিমারও। তবে প্রশাসনিক মহলের দাবি, জেলায় মা হয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার হার অনেক কমেছে। মালদহ জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন চৈতালী ঘোষ সরকার বলেন, আগে আমরা প্রচুর পরীক্ষার্থীকে দেখতাম কম বয়সে সন্তানের জন্ম দিয়ে পরীক্ষায় বসতে। এখন তা প্রায় কমেই গিয়েছে। তাঁর দাবি, কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্প চালুর পর থেকেই জেলায় বাল্য বিবাহের প্রবণতা অনেক কমেছে। জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অরিন্দম ভাদুড়িও বলেন, কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্প চালুর পর জেলায় বাল্য বিয়ে অনেক কমে গিয়েছে। পাশাপাশি নিবিড় সচেতনতা প্রচার ও পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি ভাল প্রভাব ফেলেছে।

ছাত্রীদের বাল্য বিবাহ রোখার ক্ষেত্রে যে স্কুল জেলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে সেই হবিবপুর ব্লকের দাল্লা চন্দ্রমোহন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব লাহিড়ি বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের বাল্য বিয়ের প্রবণতা একশো শতাংশ বন্ধ করা গিয়েছে। ১৮ বছরের আগে বিয়ে করা যাবে না বলে ছাত্রী ও তার অভিভাবক মুচলেকা দিলে তবেই স্কুলে ভর্তি করা হয়। ১৮ বছরের আগে বিবাহিত কোনও মেয়েকেই স্কুলে ভর্তিই নেওয়া হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement