পঞ্চায়েতে তালা। নিজস্ব চিত্র।
ভোটারদের প্রভাবিত করতেই ত্রাণের জন্য বরাদ্দ সরকারি ত্রিপল বিলির অভিযোগ উঠছে হরিশ্চন্দ্রপুরে। এই অভিযোগে বাম পরিচালিত পঞ্চায়েতে অনির্দিষ্টকালের জন্য তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের দৌলতপুর পঞ্চায়েতের ঘটনা। প্রসঙ্গত, ওই পঞ্চায়েত এলাকায় একটি সমবায় সমিতি ও মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির নির্বাচন রয়েছে। সে কারণে রাতের অন্ধকারে ত্রাণের ত্রিপল ভোটারদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ক্ষমতাসীন বাম বোর্ড ওই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ভোট থাকায় প্রশাসনের তরফে আপাতত ত্রাণ বিলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাঁচলের মহকুমাশাসক পোন্নমবলম এস বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নির্বাচন থাকায় আপাতত ত্রাণ বিলি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে এ ভাবে পঞ্চায়েতে তালা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়। দ্রুত যাতে তালা খোলা হয় সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। যে অভিযোগ উঠেছে তা নিয়েও বিডিওকে রিপোর্ট দিতে বলেছি।’’
প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ঝড়ে চাঁচল মহকুমার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি দৌলতপুর এলাকাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রশাসনের তরফে পঞ্চায়েতে ত্রাণ পাঠানো হয়। তালিকা দেখে বুথের সদস্যদের তা উপভোক্তাদের মধ্যে বিলি করার কথা। বুধবার রাতে সিপিএমের এক সদস্যের বুথে ত্রাণের ত্রিপল ভর্তি একটি ভ্যান দেখে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। অভিযোগ, সিপিএম সদস্য মোস্তাক হোসেন দুর্গতদের ত্রাণ বিলি না করে ভোটারদের দেওয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে হইচই হওয়ার পর রাতেই পুলিশ গিয়ে ওই ত্রিপল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ দিন সকালে তিন দলের নেতাকর্মীরা পঞ্চায়েত অফিসে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রশাসনের কর্তারা গেলেও বিকেল পর্যন্ত পঞ্চয়েতের তালা খুলতে দেননি তাঁরা। পঞ্চায়েত প্রধান ফরওয়ার্ড ব্লকের সুরতি দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল উস্কানি দিয়ে অভিযোগ-বিক্ষোভ করাচ্ছে। ওরা মিথ্যে অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েত দখল করতে চাইছে। বিডিওকে সব বলেছি।’’ তবে রাতের বেলায় ওই ত্রিপল কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, আগামী রবিবার দৌলতপুর সমবায় সমিতি এবং ১৪ জুন ওই পঞ্চায়েত এলাকার চিতোলিয়া হাই মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির নির্বাচন রয়েছে। দুই পরিচালন সমিতিই এখন বামেদের দখলে রয়েছে। তা দখলে রাখতেই ভোটারদের ত্রিপল দিয়ে প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি সামসুদ্দিন মিয়া হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘যতক্ষণ না প্রশাসনের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, ততক্ষণ তালা খোলা হবে না।’’ দৌলতপুর অঞ্চল কংগ্রেস সভাপতি লুত্ফুর রহমান বলেন, ‘‘ত্রাণ সামগ্রী তো পঞ্চায়েত থেকে বিলি করার কথা। কয়েকদিন ধরেই ওরা ভোটারদের ত্রিপল দিচ্ছিল। এ দিন তা হাতে নাতে ধরে ফেলা হয়।’’ সিপিএমের দলনেতা মোস্তাক হোসেনের দাবি, ‘‘ওই ত্রিপল কার তা জানি না। অযথা আমার নামে বদনাম করা হচ্ছে।’’ হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের বিডিও কৌশিক পাল বলেন, ‘‘দ্রুত যাতে পঞ্চায়েতে তালা খোলা হয় তা দেখা হচ্ছে। যে অভিযোগ উঠেছে তাও খতিয়ে দেখা হবে।’’