দুই বছরে মাত্র ৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। —প্রতীকী চিত্র।
আমদানি করা চা নিয়ে তথ্য জানিয়ে প্রশ্নের মুখে চা পর্ষদ। ‘তথ্য জানার অধিকার আইনে’ এক প্রশ্নে চা পর্ষদ জানিয়েছে, গত দুই বছরে ৫৩টি নমুনা পরীক্ষায় নেপাল থেকে আমদানি করা চায়ের ৫৬ শতাংশই ভারতের খাদ্য সুরক্ষা আইনের মাপকাঠি পার করতে পারেনি। নেপাল থেকে আমদানি করা প্রায় ৫৬ হাজার কেজি চা নষ্ট করছে পর্ষদ। তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে বছরে ১ কোটি কেজির বেশি পরিমাণ চা নেপাল থেকে আমদানি করা হচ্ছে, সেখানে কেন দুই বছরে মাত্র ৫৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হল।
ভারতের চা বিপণনকারীদের দাবি, আমদানি করা যে চা নষ্ট করা হয়েছে, তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আমদানি করা সস্তার চা দেশের বাজারে দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাইয়ের চা বলে বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে দার্জিলিং থেকে শুরু করে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর পর্যন্ত চা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চা পর্ষদের দাবি, নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চা পর্ষদের বিপণন সংক্রান্ত বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “আমদানি করা চায়ের নমুনা পরীক্ষার পরিকাঠামো বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সারা দেশেই কীটনাশক মেশানো চা এবং খাদ্য সুরক্ষা বিধি লঙ্ঘন করে তৈরি চায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমদানি করা চা তার ব্যতিক্রম হবে না। আগের তুলনায় কড়াকড়ি বেড়েছে।” চা উৎপাদকদের একাংশের প্রশ্ন, দেশের বাজারেই যেখানে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি, সেখানে কেন চা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। আমদানি করা সস্তার চা ‘অবাধে’ বাজারে ঢোকায় চা পানকারীদের স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে দেশের চায়ের বাজারও খারাপ হচ্ছে। আমদানি করা সস্তা, খারাপ মানের চা দার্জিলিং, অসম, ডুয়ার্সের চা বলে বিক্রি করা হচ্ছে। তার ফলে ওই সব চায়ের প্রতিও আগ্রহ কমছে।
উত্তরবঙ্গে চায়ের অন্যতম জোগানদার ছোট চা বাগান। প্রায় পঞ্চাশ হাজার ছোট চা বাগান রয়েছে উত্তরবঙ্গে। যার মধ্যে জলপাইগুড়ি ও উত্তর দিনাজপুরে সবচেয়ে বেশি ছোট চা বাগান রয়েছে। জলপাইগুড়িতে ২৫ হাজার, উত্তর দিনাজপুরে ১১ হাজারের বেশি ছোট চা বাগান আছে। বটলিফ কারখানা ছোট বাগানের পাতা থেকে চা তৈরি করে। আমদানি করা সস্তার চা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার তৈরি করা বলে বিক্রি হচ্ছে। যার জেরে সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে উৎপাদকদের। চা পর্ষদের দ্রুত পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
দার্জিলিঙের এক চা বাগান মালিক তথা চা পরিচালকদের সংগঠন টিপা-র সদস্য সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, “৫৩টি নমুনার তিরিশটি পাশ করতে পারেনি বলে চা পর্ষদ জানিয়েছে। আরও নমুনা সংগ্রহ করলে কী হত বোঝাই যাচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন সব জেনেবুঝেও চা পর্ষদ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে কেন?”